"ইল্যুমিনাতি" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ বাভারিয়ান প্রফেসর অ্যাডাম ওয়াইশপ্ট ১৭৭৬ সালে ইঙ্গলস্ট্যাডের একটি জঙ্গলে চারজন ছাত্র নিয়ে একটি গুপ্ত সংঘ প্রতিষ্ঠা করে। পরে সেই গুপ্ত সংঘটির নাম হয় ইস্যুমিনাতি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সরকারের উঁচু মহলে গােপনে তাদের মানুষদের বসিয়ে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা, ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার প্রতিষ্ঠা করা। অদ্ভুত সব রীতি নীতি ছিল এই গুপ্ত সংঘের। ছদ্মনাম গ্রহণ, গােপনীয়তা, রক্ত শপথ নিয়ে সংঘের জন্যে নিজের সব কিছু বিসর্জন দেওয়া, এবং তিনটি স্তর ভিত্তিক তেরটি শ্রেণীতে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতির রীতি। এই সংঘ অল্প সময়েই বিস্তার লাভ করে। লেখক, কূটনীতিবিদ এবং অন্যান্য পেশার বিখ্যাত মানুষেরাও এই গােপন সংঘে যােগ দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। অবশ্য সমাজের গণ্যমান্য, ধনাঢ্য মানুষদেরই কেবল দলে যােগ দেওয়ার সুযােগ হতাে, সাধারণ মানুষদের নয়। ১৭৮৪তে এসে ইলুমিনাতির দু’হাজারের বেশি সদস্য হয়ে যায়। ইস্যুমিনাতি এবং এর আগের আরেক ভ্রাতৃ-সংঘ, ‘ফ্রি মেসনরিকে’ বাভারিয়ার সরকার নিষিদ্ধ ঘােষণা করে। ক্যাথলিক চার্চও এ দু’টি গুপ্ত সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। ইলুমিনাতির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযােগ আনা হয়। তাদের কাগজ পত্র ঘেঁটে অদৃশ্য কালি তৈরির প্রক্রিয়া, গর্ভপাতের পদ্ধতি, আত্মহত্যার স্বপক্ষে যুক্তি, এমন অদ্ভুত সব বিষয়ের বর্ণনা পাওয়া যায়। তৎকালীন বাভারিয়া, যা এখন জার্মানির অংশ, এই গােপন সংঘটির মূলােৎপাটন করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে ইলুমিনাতি নিয়ে অনেক চমকপ্রদ কাহিনি ছড়াতে থাকে। যেমন, ফরাসি বিপ্লবের পিছনে ইলুমিনাতির হাত ছিল। তারও পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্যে, জন এফ কেনেডির হত্যাকান্ড এবং এমন অনেক বড় বড় ঘটনার জন্যে ইলুমিনাতিকে দায়ী করা হয়। এসব কাহিনিকে বলা হয় কন্সপিরেসি থিওরি' বা ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’। ষাটের দশকের শেষের দিকে নৈরাজ্যবাদ তত্তে বিশ্বাসী রবার্ট এন্টন উইলসন ইলুমিনাতি ধারণাটিকে নতুন করে ছড়িয়ে দেন। ১৯৭৫ এ প্রকাশিত তার এবং রবার্ট শের রচিত “ইলুমিনেটাস: ট্রিলজি” নামের উপন্যাস ত্রয়ী বর্তমান ইলুমিনাতি ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সূচনা করে। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম কন্সপিরেসি থিওরি হলাে ইলুমিনাতি। অনেকের বিশ্বাস, ইলুমিনাতি ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে পুরাে পৃথিবী চালায়, সবার অগােচরে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। এই উপন্যাসের মূল ঘটনা ইলুমিনাতি, করােনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট ও তার ভ্যাক্সিন নিয়ে আবর্তিত। এখানে সায়েন্স ফিকশন এবং থ্রিলারের সুন্দর সন্মিলন ঘটেছে।
মোস্তফা তানিম লেখালেখি করছেন দুই দশক ধরে। বাংলাদেশের যে স্বল্প সংখ্যক লেখক সায়েন্স ফিকশন লিখে পাঠকের মনোযোগ কেড়েছেন, মোস্তফা তানিম তাদেরই একজন। লেখক-তীর্থভূমি হিসেবে খ্যাত ''কচি কাঁচার আসর'' দিয়ে তার লেখক জীবনের সূচনা। নব্বই দশকে পত্রিকার জন্য দুই হাতে লিখেছেন। লেখালেখির মতো তার পেশাও ভীষণভাবেই বিজ্ঞানকেন্দ্রিক। বুয়েটে লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি একটি মার্কিন আই,টি, কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। বিজ্ঞান তার একটা প্রিয় বিষয়, তার লেখায় সেটার স্পষ্ট ছাপ পড়েছে। বিজ্ঞানের সাথে কলার বিরোধ আছে। মোস্তফা তানিম অসামান্য দক্ষতায় সেই বিরোধ সামলান তো বটেই, মাঝে মাঝে দু'টোকে বেশ দারুনভাবে সমন্বয় করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ন'টি।