ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস অনেক লেখা হয়েছে। বিশেষ করে বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাস, যারা বিভিন্ন বিপ্লবী গোষ্ঠীতে ছিলেন তারাই তুলে ধরেছেন রক্তাক্ত সংগ্রামের পটভূমি। কেউ আত্মজীবনীর ঢঙে রক্তাক্ত যুগের কাহিনি লিখেছেন, কেউবা স্বকীয় গোষ্ঠীর ভূমিকার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন ইতিহাস। এছাড়া ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা স্বাধীনতা আন্দোলন সম্বন্ধেও লিখেছেন। কিন্তু বিশেষ কোনো জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস রচনার নজির বেশ বিরল। সেই দিক দিয়ে অজিত কুমার নাগকে অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তার স্বাধীনতা সংগ্রামে খুলনা বইটি ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে খুলনার অবদানকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের দশটি অধ্যায়ে রচিত তাঁর এই গ্রন্থ খুলনার সংগ্রামী ঐতিহ্য ও স্বাধীনতা আকাক্সক্ষার চিত্র তুলে ধরেছে। প্রথমে ইতিহাসের আলোয় খুলনা অধ্যায়ে তুলে ধরেছেন জেলার ইতিহাস, তারপর তিনি চলে এসেছেন সংগ্রামের মনোসামাজিক পটভূমি এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট বর্ণনায়। পরবর্তী অধ্যায়গুলিতে বিভিন্ন ঘটনাবলি, সংস্থা গঠন, পুলিশি দমন-পীড়ন, ছাত্র-আন্দোলন সম্পর্কে বিষদ পর্যালোচনা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, লেখক এই বইটি দিয়ে শুধুমাত্র আঞ্চলিক ইতিহাসের অপূর্ণ দাবিই মেটাননি, আত্মবিস্তৃত বাঙালির হয়ে এক বিরাট ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন খুলনা জেলার সক্রিয় ও আত্মবলিদানকারী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিস্মৃত জীবনকাহিনি তুলে ধরে। এ কাজ এর আগে কেউ করেননি, করতে চেষ্টাও করেননি।