আবদুস সালাম রচিত ছড়া-পদ্য-কবিতার বই করোনানুভূতি এই রুদ্ধতার দিনে বয়ে যাওয়া প্রসন্ন হাওয়ার মতন। শিরোনামই দিয়ে দেয় বিষয়ের সন্ধান। তবে, তাঁর ছড়া-কবিতার উপজীব্য বিষয়বস্তু বিচিত্র। ‘যদি এবার বাঁচতে পারি’ হয়তো একটি কবিতার শিরোনাম কিন্তু এটি বইয়ের মধ্যকার কবিতাগুলোর একটি শ্রেণিরই প্রতিনিধিত্বকারী যে-শ্রেণিটিতে বিধৃত হয়েছে অতিমারীর সময়কার মানব-পরিস্থিতি, হঠাৎ বদলে যাওয়া চারদিককার দৃশ্যপট এবং বিমূঢ়তা ও বিস্ময়ের আভাস। আছে বেদনামাখানো কি দীর্ঘশ্বাসের বাস্তবতা “কোলাকুলি বাদ দিয়েছি/দূরে থাকা ভালো।/হাত নেড়েছি বন্ধু দেখে/মুখটা করে কালো।” আবার, প্রত্যাশা-ভবিতব্য ও বর্তমানের দোলাচল টের পাই ‘মুখ ও মুখোশ’ ‘বৈরী সময়’ ‘মেঘের ভেতর সূর্য আছে’ প্রভৃতি কবিতায়। প্রকৃতির মুগ্ধতা, বিবর্ণতার জন্যে হাহাকার এসবের মধ্যে অন্তর্গত বোধে উঠে আসে গ্রাম, নদী কি বাবা-মায়ের স্মৃতি ও সত্তা। আবদুস সালামের এ-বইয়ের আঞ্চলিক ছড়াগুলো ভিন্ন দ্যোতনাসঞ্চারী। ‘মরার করোনা’ কেবল বর্তমানের প্রতি তাঁর বীতরাগের উপলক্ষ্য নয়, এ এক লোকোভাষারও চিত্রণ। করোনানুভূতি একটি বিশেষ মাত্রিকতাকে শিরোনামে বহন করলেও বইটিতে স্থান পেয়েছে বিচিত্র স্বাদের কবিতা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণেচ্ছু ফরাসি যুবক জ্যঁ কুয়ে’কে নিয়েও তিনি লিখেছেন কবিতা। বিষণœতার প্রতিবেশেও চেতনাকে জাগর রাখবার অধ্যবসায়ী কবি আবদুস সালাম। ০৪ নভেম্বর ২০২০ মহীবুল আজিজ অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
আবদুস সালাম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন সৃজনশীল মানুষ। অধ্যাপনা করছেন গত একুশ বছর ধরে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাহিত্য পত্রিকায় তাঁর বেশকিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে তাঁর সক্রিয় উপস্থাপনা ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করলেও এবারই বৈরী সময়ের কিছু পদ্য নিয়ে তাঁর লেখা প্রথম গ্রন্থ "করোনানুভূতি" প্রকাশিত হলো। এই গ্রন্থে অবরুদ্ধ সময়ের যাপিত জীবনের কিছু আনন্দ বেদনার ছবি মূর্ত হয়ে উঠেছে। আশা করি, পাঠক এই গ্রন্থ থেকে একটু ভিন্ন মাত্রার আনন্দ উপভোগের সুযোগ পাবেন। তাঁর পুরো নাম মোহাম্মদ আবদুস সালাম। আবদুস সালাম, জন্ম ৯ জুন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ, পিতা- কবির আহমদ, মাতা- আছিয়া খাতুন, জন্মস্থান- পশ্চিম শাকপুরা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন যথাক্রমে ১৯৯২ ও ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ২৪তম বিসিএস এর কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে কর্মরত। এর আগে তিনি বরিশাল ও ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ এবং সরকারি মহিলা কলেজ, চট্টগ্রামে অধ্যাপনা করেছেন।