অগ্নিকোণ ঐতিহাসিক উপন্যাস। পটভূমি চট্টগ্রাম ও বার্মা। সময়কাল ১৯২০ থেকে ১৯৩৪। বিষয় চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ ও চট্টগ্রাম বার্মা সম্পর্ক। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মাস্টারদা সূর্য সেন ও তাঁর সহযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিষাদাত্মক আখ্যান পাশাপাশি বর্মীদের বাঙালি বিদ্বেষের কারণ ও ফলাফল। অগ্নিকোণ উপন্যাসের সূচনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুব মানসের হতাশা ও নৈরাশ্যের ফলে সৃষ্ট মুক্তির আকাঙ্খা থেকে। একদিকে চট্টগ্রাম কংগ্রেস মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনকে মান্যতায় এনে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে অন্যদিকে সূর্য সেন গড়ে তুলেছে সশস্ত্র সংগঠন। ঘটাচ্ছে সহিংস ঘটনা। অস্ত্রাগার লুঠ করে, রেল লাইন উপড়িয়ে, টেলিগ্রাফ অফিস ধ্বংস ও ইউরোপিয়ানদের হত্যা করে টলিয়ে দিচ্ছে ব্রিটিশ শাসনের ভিত। যুদ্ধোত্তর মন্দা ও বেকারত্বে অসহায় হয়ে চট্টগ্রামের আরেকদল লোক। ভাগ্যান্বষণে পাড়ি জমিয়ে থিতু হচ্ছে বার্মায়। বর্মী সুন্দরীদের বিয়ে করে রেঙ্গুনে সৃষ্টি করছে নতুন জেরবাদি প্রজন্ম। বর্মী স্ত্রীদের চাটগাঁয় এনে জন্ম দিচ্ছে নানা তিক্ত মধুর গল্প। ধনে, মানে, বৈভবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেও। প্রাণে তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন। বার্মায় অবস্থানরত । স্বাধীনতাকামীদের সংগঠিত করে, পলাতক বিপ্লবীদের জড়ো করে, জেরবাদি স¤প্রদায়ের অস্ত্রশক্তি নিয়ন্ত্রণে এনে চট্টগ্রামের যুব বিদ্রোহের অনুরূপ ঘটনা ঘটাতে উদ্যোগ নেয় তারা। দীর্ঘকাল এসবকিছু নিশ্রæপ অবহেলায় হজম করলেও ১৯৩০ সালের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনা বর্মীদের মনে অভিঘাত তৈরি করে। অং সানের নেতৃত্বে শুরু হয় আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রাম। মন্দিরের পুরােহিতদের সমর্থন নিয়ে তারা তুমুল জাতীয়তাবাদী ও বাঙালি বিদ্বেষী হয়ে ওঠে। বার্মা বর্মীদের বার্মা বৌদ্ধদের এই জিগির তুলে বাঙালিসহ ভারতীয়দের বার্মা থেকে বিতাড়নের সূচনা করে। মোটকথা চট্টগ্রাম ও বার্মার রাজনৈতিক। স্বাতন্ত্রচেতনা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে অভিঘাত তৈরি করেছিলো তারই আনুপূর্বিক বিবরণ অগ্নিকোণ। স্বাধীনতা সংগ্রামে সূর্য সেন ও তার সহযোদ্ধাদের। পাশাপাশি চট্টগ্রামের অসংখ্য মানুষের অনালোচিত। অবদানের বিশ্বস্ত রূপায়নে হৃদ্য অগ্নিকোণ। পাশাপাশি এই সময়ে রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নের মর্মস্তুদ ঘটনাবলী সৃষ্টির সূচনাও এতে দৃশ্যমান। দুই শতাধিক ঐতিহাসিক চরিত্রের সদর্ভ উপস্থিতি, অজস্র ঘটনাপ্রবাহের নির্মোহ বর্ণনা ও শতবর্ষ পূর্বের আর্থ সামাজিক বিবরণে সমৃদ্ধ অগ্নিকোণ নিঃসন্দেহে। মহাকাব্যিক উপন্যাসের অভিধায় পরিচিত। পাশা মোস্তফা কামাল ১৯.০৫.২০২১
আজাদ বুলবুল একাধারে শিক্ষক, গবেষক, কথাসাহিত্যিক, বাচিকশিল্পী ও শিক্ষা প্রশাসক। জন্ম- ১৯৬৫ সালের ১ নভেম্বর, নোয়াখালী জেলার চাটখিলের রামনারায়ণপুরে। বাংলা সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর, এম ফিল ও পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে রাঙ্গামাটি মহিলা কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ও গাছবাড়িয়া কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। কর্মজীবনের সূচনা সাংবাদিকতা দিয়ে হলেও পানছড়ি কলেজে শিক্ষকতাকালে অরণ্যচারী আদিবাসী অন্ত্যজদের জীবনালেখ্য রূপায়ণে নিবিষ্ট হয়ে ওঠেন। আশির দশকের মধ্যভাগে লেখালেখি শুরু করলেও প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত ১৯৯৯ সালে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ, বসবাসরত জনজাতির। ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘হালদা’ চলচ্চিত্রের কাহিনি রচনার জন্য তিনি ২০১৭ সালের সেরা কাহিনিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৮ সালে প্রকাশিত তার মহাকাব্যিক উপন্যাস ‘অগ্নিকোণ’ দেশে বিদেশে। বিপুলভাবে সমাদৃত হয়। আজাদ বুলবুলের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১২টি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৫ বছর শিক্ষকতা করার পর ২০১৬ সালে তিনি শিক্ষা প্রশাসনে যােগ দেন। তাঁর বিদ্যায়তনিক নাম ড. গাজী গোলাম মাওলা। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক পদে কর্মরত রয়েছেন।