বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) বাঙালির ইতিহাসে অতুলনীয় এক রাষ্ট্রপ্রধানের নাম। তিনি ছিলেন একাধারে বাঙালি জাতির পিতা, বাংলাদেশের স্থপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। শৈশব থেকেই তিনি বাংলার সমাজে বিদ্রোহী হিসেবে আবির্ভূত হন। স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষার কারণে বাঙালি জাতি তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলন, মাতৃভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করেন। দেশ ও জাতির প্রতি অপরিসীম অবদানের কারণে বাঙালি জাতি তাঁকে জাতির পিতা, জাতির জনক ও স্বাধীনতার স্থপতির আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী ধর্মপ্রাণ একজন মুসলমান। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি, শোষণ, নির্যাতন-নিপীড়ন, জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সর্বদা সোচ্চার। ফলশ্রুতিতে তাঁকে জীবনের বিরাট একটি সময় কারাগারে অতিবাহিত করতে হয়েছে। কারাগারের সময়গুলোতে তিনি গ্রন্থ রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। এসকল গ্রন্থে তাঁর ধর্মীয় চিন্তাধারা সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই বঙ্গবন্ধুর রচনাবলিতে ধর্মীয় চিন্তাধারা গ্রন্থটি প্রণীত। বঙ্গবন্ধু লিখিত তিনটি গ্রন্থের একত্রিত রূপই হলো এ গ্রন্থটি। গ্রন্থটিতে ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু ও ধর্মচিন্তক বঙ্গবন্ধুর পরিপূর্ণ অবয়ব পরিস্ফুটিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এ যাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে এ গ্রন্থটি ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। কেননা বঙ্গবন্ধুর রচনাবলি বিষয়ে এরূপ তথ্যনির্ভর দালিলিক গ্রন্থ দ্বিতীয়টি রচিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। লেখকদ্বয় বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন নির্মোহভাবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে। প্রামাণিক তথ্য ছাড়া গ্রন্থের কোথাও ব্যক্তিগত অভিমত ও আবেগকে প্রশ্রয় দেয়া হয়নি। এরূপ বৈশিষ্ট্যের কারণে গ্রন্থটি পাঠক সমাজের নিকট আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ^াস। বঙ্গবন্ধুর রচনাবলিতে ধর্মীয় চিন্তাধারা গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের একটি আকরগ্রন্থ হিসেবে পাঠক সমাজে বিবেচিত হবে, এ কামনা করছি।