‘বিদ্যাসাগরের ইহজাগতিকতা ও অন্যান্য’ আঠারোটি প্রবন্ধের সংকলন। নবজাগরণের অগ্রদূত বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেশে-বিদেশে অসংখ্য প্রবন্ধ লিখিত হয়েছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে, শিক্ষাবিস্তারে, সমাজসংস্কারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা তুলনারহিত। চারিত্রিক দৃঢ়তা, মহানুভবতা ও পাণ্ডিত্যকে ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় যে বৈশিষ্ট্য বিদ্যাসাগরকে অনন্যতা দান করেছে সেটি হচ্ছে তাঁর ইহজাগতিকতা। তিনি দয়ার সাগর, বিদ্যার সাগর, করুণার সাগর-এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এগুলোই যে সব নয়, বিদ্যাসাগরের প্রকৃত পরিচয় যে তাঁর ইহজাগতিক জীবনদর্শনের মধ্যেই নিহিত তা বলিষ্ঠ যুক্তিসহকারে উপস্থাপন করেছেন প্রত্যয়ী প্রাবন্ধিক ও গবেষক রাজীব সরকার। ইহজাগতিকতার আলোকে বিদ্যাসাগরের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যকে যুক্তিবাদী ও নির্মোহ দৃষ্টিতে অবলোকন করেছেন তিনি। শুধু বিদ্যাসাগর নন, তাঁর আদর্শের অনুসারী কীর্তিমান বাঙালিদের সম্পর্কেও আলোকপাত রয়েছে সংকলনটিতে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বুদ্ধদেব বসু, অন্নদাশঙ্কর রায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, যতীন সরকার, আনিসুজ্জামান সম্পর্কে আলোচনা এই বইয়ের গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশে সৃজনশীল সাহিত্যের তুলনায় মননশীল সাহিত্য নিষ্প্রভ। ক্ষুরধার যুক্তি ও তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণে ঋদ্ধ রাজীব সরকারের এ প্রবন্ধগ্রন্থ আমাদের প্রবন্ধ সাহিত্যে উজ্জ্বল সংযোজন।
রাজীব সরকারের জন্ম ১৯৮০ সালে ময়মনসিংহে । তাঁর নিজ জেলা কিশোরগঞ্জ। উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ ও যুক্তরাজ্যের নর্দাম্ব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক রাজীব সরকার। ১৮তম জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল তাঁর নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয় এবং তিনি শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে পাঠচক্র সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিন বছর। বিভিন্ন দৈনিক ও সাহিত্যপত্রে লেখালেখি করেন। তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থ : বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার ভবিষ্যৎ (২০০১), নিহত রবীন্দ্রনাথ, যুক্তি+ তর্ক = বিতর্ক (২০১২), মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে (২০১৪), সাহিত্যিকের সমাজচেতনা ও অন্যান্য ভাবনা (২০১৫) এবং ইউরোপের পথে পথে (২০১৬)। তিনি এশিয়া, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার ১৬টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। স্ত্রী সুদীপ্তা সরকার। দুই পুত্র সাগ্নিক ও ঋত্বিক।