দেশ-বিদেশ ভ্রমণের মাধ্যমে যেমন চিত্তবিনোদন ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায় তেমনিভাবে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভা-ারকেও সমৃদ্ধ করা যায় তাতে কোনো সন্দেহ নাই। এই বইয়ের লেখক ছোটবেলায় আকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখতেন (যখন তিনি বাস, ট্রেন, বিমান ভ্রমণ তো দূরের কথা এগুলি দেখতে কেমন তাও জানতেন না) যা পরবর্তীতে আংশিক হলেও পূরণ হয়েছে। আমরা বিজ্ঞ ব্যক্তিদের ভ্রমণ কাহিনী পড়ে থাকি। যেমন সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশ বিদেশে’ ও আবদুই হাইয়ের ‘বিলেতে সাড়ে সাতশত দিন’ যা যে কোনো তরুণ-তরুণীর মনকে দেশ ভ্রমণের জন্য অনুপ্রাণিত করে। অগোছানো হলেও লেখক তার বইয়ের মাধ্যমে বিশেষকরে ভবিষ্যত প্রজন্মকে তাদের জ্ঞান ভা-ার সমৃদ্ধির একসুপ্ত আহ্বান জানিয়েছেন। যেমন তার লেখা ‘বিলেতের একাল-সেকাল ও কূটনীতির স্বাদ’ গ্রন্থটি পাঠ করলে যেমন পাঠকের মনে আইফেল টাওয়ার, লুভোমিউজিয়াম, স্ট্যাচু অব লিবার্টি, ম্যাডাম টুসা, গ্রেট ওয়াল, স্টোন হেঞ্জ সম্পর্কে একটা ধারণার সৃষ্টি করতে পারে যা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো হলেই বা কম কি? তাই ভ্রমণকে জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির একা যোগ্য বাহক হিসেবে গণ্য করাই যায়। তবে লেখকের বর্তমান বইটি সে লক্ষ্য পূরণে কতটা সফল তা সম্মানিত পাঠকবৃন্দই বিচার করবেন।
এম. সাইদুর রহমান খান ৪৩ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সেখানে তিনি উপ-উপাচার্য (১৯৯৭-১৯৯৯) ও উপাচার্যের (১৯৯৯-২০০১) দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এবং আয়ারল্যান্ডে অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নিয়ােগ দেয়। ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০১২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সফলভাবে সে দায়িত্ব পালন শেষে পুনরায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যােগ দেন। ১৯৯৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি লাভে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও ১৯৬৯ সালে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালের ১ জুলাই তিনি তৎকালীন ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার হিসেবে যােগ দেন ও ১৯৮৬ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ১৯৭৭ সালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৯২ সালে লন্ডনের ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পােস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। তিনি সুইডেনের উপাসালা ও গােথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইতালির ট্রিয়েস্টে অবস্থিত ICTP-তে উচ্চতর গবেষণা করেন। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র Solid State Physics-এর Thin Films ও Solar Energy সংশ্লিষ্ট বিষয়। তাঁর তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েকজন গবেষক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ত্বড়িৎ চুম্বকীয় তত্ত্ব এবং পালস ও সুইচিং বর্তনী পাঠ্যপুস্তক দুটির তিনি যুগ্ম লেখক। তার প্রায় অর্ধশত গবেষণা প্রবন্ধ দেশী-বিদেশী জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২৫টি আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন এবং ৩৫টি দেশ ভ্রমণ করেছেন । ২০০৭ সালের ২০-২৪ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ঘটনার প্রেক্ষিতে যৌথবাহিনী ড. খানকে গ্রেফতার করে। দশ দিনের রিমান্ড শেষে প্রায় সাড়ে তিন মাস কারাগারে বন্দি থাকার পর ৪ ডিসেম্বর ২০০৭ সালে আদালতের রায়ে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পান। তাঁর সেসব দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা অন্ধকারায় বন্দি বিবেক বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি ১৯৪৬ সালের ৬ অক্টোবর পাবনার বেড়া উপজেলার বড় নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর বর্তমানে তিনি রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সরকার অনুমােদিত বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।