"লাইফ আফটার লাইফ" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ আমার সুযােগ হয়েছে ড. রেমন্ড মুডি রচিত 'লাইফ আফটার লাইফ (জীবনের পর জীবন) প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে গ্রন্থটি পাঠ করার এবং আমি আনন্দিত যে তরুণ পণ্ডিত সাহসিকতার সঙ্গে এ ধরনের নতুন একটি গবেষণাকে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। আমি যেহেতু বিগত দুই দশক যাবৎ মৃত্যুপথযাত্রী অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিত্সা সেবা দিয়ে যাচ্ছি, আমার পক্ষে মৃত্যুকে কাছে থেকে দেখার সুযােগ হয়েছে। মৃত্যুর প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানার সুযােগ পেয়েছি, কিন্তু মৃত্যুর মুহূর্ত এবং যখন আমাদের রােগীদের মৃত বলে ঘােষণা করা নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। ড, মুডি যে গবেষণা করেছেন তা এই অমীমাংসিত প্রশ্ন সম্পর্কে চিন্তাশীল মানুষকে আলােকিত করবে এবং মৃত্যুর পর আরেকটি জীবন রয়েছে বলে আমরা দুই হাজার বছর যাবৎ যা শিখিয়ে আসছি তা নিশ্চিত করবে। যদিও তিনি এমন দাবি করেননি যে তিনি মৃত্যু নিয়ে কাজ করেছেন, কিন্তু তার গবেষণার ফল থেকে এটা স্পষ্ট যে, কোনাে মরণাপন্ন রােগীকে তাত্ত্বিকভাবে অর্থাৎ ক্লিনিক্যালি মৃত ঘােষণার পরও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে তার মাঝে এক ধরনের সচেতনতা কাজ করে। এ সম্পর্কে আমার নিজস্ব গবেষণার ফলাফলও অভিন্ন যে অনেক ক্ষেত্রে আমরা কোনাে রােগীকে বাঁচিয়ে তুলার সকল আশা ত্যাগ করার পর রােগী জীবিত হয়ে উঠেছেন, এবং এ ধরনের ঘটনাকে অলৌকিক বলে স্বীকার না করলেও অত্যাধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সূক্ষতায় দক্ষ চিকিৎসাবিদদেরকেও বিস্মিত করেছে। এ ধরনের সকল রােগীর অভিজ্ঞতা হচ্ছে, তাদের দেহ যেন শূন্যতায় ভাসছে, যার সাথে যুক্ত ছিল অদ্ভুত এক প্রশান্তি ও সামগ্রিকতা। তাদের অধিকাংশই উপলব্ধি করেছেন যে, অপর এক ব্যক্তি তাদেরকে সহায়তা করেছেন ভিন্ন এক অস্তিত্বে যেতে। তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছে তাদের কোনাে প্রিয়ভাজন, যিনি তাদের আগে লােকান্তর করেছেন অথবা কোনাে ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, যিনি তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিলেন এবং একই ধর্মীয় বিশ্বাসের অধিকারী। আমি যখন আমার গবেষণার ফলাফল লেখার জন্য প্রস্তুত হয়েছি, ঠিক তখনই ড. রেমন্ড মুডির গ্রন্থটি পাঠ করে আমি আলােকিত হয়েছি। ড. রেমন্ড মুডিকে দুটি প্রধান ক্ষেত্র থেকে বিরূপ সমালােচনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রথমত যাজকদের পক্ষ থেকে, কারণ নিষিদ্ধ অথবা অচিন্তনীয় বলে বিবেচিত একটি ক্ষেত্রে কারও পক্ষে গবেষণা চালানাে তাদের কাছে ধৃষ্টতা তুল্য। একটি বহুজাতিক চার্চের কিছু ধর্মীয় প্রতিনিধি ইতােমধ্যে এ ধরনের গবেষণার তীব্র সমালােচনা করেছেন। একজন যাজক এটিকে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের উপায় বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যেরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রশ্নটি অন্ধবিশ্বাস হিসেবেই থাকা উচিত এবং এ নিয়ে কারও প্রশ্ন তােলা উচিত নয়। দ্বিতীয় একদল লােক মনে করেন যে ড. মুডি যা করছেন বিজ্ঞানী ও পদার্থবিদদের কাছে তা বিজ্ঞানসুলভ কিছু নয়। আমার মনে হয় আমরা আমাদের সমাজের এক ক্রান্তিকালে উপনীত হয়েছি। নতুন দ্বার উন্মােচনের সাহস আমাদের থাকা উচিত এবং স্বীকার করা উচিত যে এ ধরনের বহু নতুন তদন্তের জন্য বর্তমান বৈজ্ঞানিক উপকরণ এখনও অপ্রতুল। আমি বিশ্বাস করি যে এই বইটি উদারমনা মানুষের জন্য এই নতুন দরজাগুলাে উন্মুক্ত করে দেবে এবং নতুন ক্ষেত্রগুলাের ওপর গবেষণা মূল্যায়নে তাদের মধ্যে আশা ও সাহস সঞ্চার করবে। তারা জানবে যে ড. মুডি তাঁর গবেষণার মাধ্যমে বিষয়গুলাে তুলে এনেছেন তার ভিত্তিতে গ্রন্থর্ভুক্ত বিবরণী সত্য। কারণ এটি একজন প্রকৃত সৎ তদন্তকারী কর্তৃক লিখিত হয়েছে। এর সাথে এ বিষয়ে আমার নিজের ও অন্যান্য বিজ্ঞ বিজ্ঞানী, পণ্ডিত ও সত্যানুসন্ধানী যাজকদের গবেষণার ফলাফলের সামঞ্জস্য রয়েছে। তারা এই আশায় নতুন একটি ক্ষেত্রের ওপর গবেষণা করেছেন, যা এ বিষয়ে বিশ্বাস করার চেয়ে বরং যারা জানতে আগ্রহী তাদের জন্য সহায়ক হবে।