"৭১-এর রক্তঝরা দিনগুলি" বইটির ভুমিকা থেকে নেয়াঃ ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত থাকাকালীন, দাদার গুরুতর অসুস্থতার কারণে জরুরি মাত্র তিনদিনের ছুটিতে আমার বাবা তকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত হাবিলদার আব্দুল আজিজ গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। আর এভাবেই অলৌকিকভাবে বেঁচে যান কুমিল্লা সেনানিবাসে সংঘঠিত বর্বর গণহত্যা থেকে। পরবর্তীকালে তিনি নিজের জান-মাল, পরিবার-পরিজন ত্যাগ করে প্রায় ০৮ মাস সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি পুনরায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যােগদান করেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিশেষ করে সিগন্যাল কোরের পুনর্গঠনে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা রাখেন। তাঁর ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকালীন হৃদয়গ্রাহী ঘটনাবলি তিনি প্রথমতাে ১৯৭২ সালে এবং পরবর্তীকালে অবসরে যাবার পর আনুমানিক ২০০০ সালে পুনরায় আরেকটি ডায়ারি লিখেন। ২০১২ সালে তার মৃত্যুর পর আমার ছােটো বােন, আয়শা আক্তার (ডলি) বাবার ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাঝে একটি ডায়ারি দেখতে পায়। ডায়ারিটি পড়ে বুঝতে পারে যে এটি বাবার লেখা ১৯৭১ সালের সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলির বর্ণনা। আমাকে এ ব্যপারে জানালে আমি এতে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করি এবং ডায়ারিটি সংগ্রহ করি। ডায়ারিটি পড়ে আমি অত্যন্ত আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। সিদ্ধান্ত নিই, এটিকে পুস্তক হিসেবে প্রকাশ করার। তারই বাস্তবরূপ এ বইটি। ডায়ারিটির হুবহু বর্ণনা দিয়েই মূলত বর্তমান পুস্তকটি লেখা। তবে ভাষাগত ত্রুটির কারনে কিছু কিছু স্থানে সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। বইটির শুরুতে আমার লেখা একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধকালীন আমার স্মৃতি থেকে লেখা। বর্ণিত ঘটনাবলির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেশ কিছু ছবি দেয়া হয়েছে যা পাঠককে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ১৯৭১-এর কথা মনে করিয়ে দেবে। দেশের জন্য যারা জীবন দিলেন, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার পরিজন ছেড়ে যুদ্ধে গেলেন, সেইসব অকুতােভয় মুক্তিসেনাদের জন্যইতাে আমরা পেলাম স্বাধীন এই দেশ। তাঁদের ঋণ শােধ করার নয়। এদেশ তাঁদের স্মরন করবে আজীবন শ্রদ্ধাভরে, বিনম্রচিত্তে। আর সেই বীরদেরই একজন আমার জন্মদাতা বাবা, আমার জন্মদাত্রী মা, ভাবতেই অনেক ভালাে লাগে, নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হয়। এ বইটির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালীন একজন বীর মুক্তিযােদ্ধার জীবনের কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলাে। আশা করি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ বইটি সকলেরই ভালাে লাগবে। বাবার এ ডায়ারিটি অনেক তথ্যবহুল। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, বিশেষ করে সশস্ত্রবাহিনীর জেসিও-ওআরদেও জন্য দেশের প্রয়ােজনে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে যাওয়ার এক অনুপ্রেরণা। এর মধ্য দিয়ে জনগণ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের "সােনার বাংলা" গঠনে নিজেকে নিয়ােজিত করবে এই আমাদের প্রত্যাশা।