সালতানাত অব ওমান। পার্সিয়ান গালফ আর আরব সাগর বিধৌত চমকে দেবার মতো এক আরব্য উপদ্বীপ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিশিষ্ট সাহাবি মাজেন বিন গাদুবা (রা.)-এর স্মৃতিধন্য এই ওমান। আরব্য রজনীর দিগ্বিজয়ী নাবিক সিন্দবাদের স্মৃতিধন্য এই ওমান। একদিকে তৃষিত জলধি, আরেকদিকে পৃথিবীর বিখ্যাত বালুকাময় মরুভ‚মি রুবা আল খালি। মাঝে জাজিরাতুল আরবের এই জনপদের রূপবৈচিত্র্য পৃথিবীকে অবাক করে দিয়েছে। পাহাড়, সাগর, মরুভ‚মি, প্রাসাদ আর বিপরীত আবহাওয়ার সেই সহাবস্থান পৃথিবীর খুব বেশি দেশে নেই যা আছে ওমানে। আরব্য উপদ্বীপের এই জনপদে রয়েছে বৈচিত্র্যের সমাহার। পরস্পর বিরোধিতার সমুজ্জ্বল উপস্থিতি এই মরু জনপদে। একদা মৎস্যজীবী আর মরুচারী বেদুইন জীবনযাপনে অভ্যস্ত এই জনপদের মানুষের জীবনে আজ লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। কয়েক হাজার বছর আগে থেকেই এখানে জীবনের উপস্থিতির সন্ধান পাওয়া গেছে। রাজধানী মাস্কাট প্রথম শতাব্দীতেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আরব উপদ্বীপে প্রবেশের একটি কৌশলগত রাস্তা হিসেবে বহু আগে থেকেই পরিগণিত হয়ে আসছে ওমান। পর্তুগিজরা এদেশে আসে ১৫০৮ সালে। প্রায় দেড়শ বছর পর ওসমানিরা এসে পর্তুগিজদের তাড়িয়ে দেয় এবং সুলতানি শাসনের সূচনা করে একটি ইয়েমেনি উপজাতির মাধ্যমে। এই শাসন চলে ১৭৪১ সাল পর্যন্ত। পরে পারস্যের আক্রমণে ওসমানি শাসনের পতন ঘটে। ওই সময়টাতে আরব উপদ্বীপের এই জনপদটি ছিল অর্থনৈতিকভাবে খুবই সমৃদ্ধশালী। ওমানি জনসংখ্যার ৮৫ ভাগ মুসলিম। এই দেশে খ্র্রিস্টান ও হিন্দু ধর্মের উপস্থিতি রয়েছে। অষ্টম শতকের মাঝামাঝিতে ওমানিরা এক নতুন বিশ্বাসের জাগরণ ঘটিয়েছিল। যার নাম এবাদি মতবাদ। ওমানে মুসলিম জনগণের মধ্যে এবাদি মতবাদে বিশ্বাসী বেশি। নবম শতাব্দী থেকে এবাদি মতবাদ এই আরব উপদ্বীপে বিস্তার লাভ করে। মুসলমানদের মধ্যে এবাদি ভাবধারা মধ্যমপন্থি রক্ষণশীল হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। ১৯৭০ সালে ব্রিটিশরা চলে যাবার পর সুলতান কাবুস বিন সাইদের হাত ধরে স্বাধীনভাবে চলতে শুরু করে সালতানাত অব ওমান। আজকের এই আধুনিক ওমানের রূপকার সুলতান কাবুস বিন সাইদ। তিনটি মহাদেশেরই সমুদ্রপথ ব্যবহারের জন্য আরব উপদ্বীপ সালতানাত অব ওমানকে প্রয়োজন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সমুদ্র শাসন করে আসছে ওমান। ভারত মহাসাগর এবং পারস্য সাগরের ওপর বাণিজ্যিক কৌশলগত অবস্থান বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভ‚মিকা রাখছে। জাজিরাতুল আরবের যতগুলো দেশ আছে, তার মধ্যে ওমান অন্যতম। ওমানিরা আরব হলেও আরবের অন্যান্য দেশের চাইতে ওমানিদের পোশাক-আশাক বেশ-ভ‚ষা আচার-আচরণ এমনকি খাদ্যাভ্যাসেও কিছুটা ভিন্নতা আছে। যদিও ভাষা আরবি। ওমানের বিভিন্ন বেদুইন গোত্র তাদের ভাসমান জীবনের অবসান ঘটিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। কিন্তু ভুলে যায়নি তাদের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে। এই জনপদের মানুষের সরলতা, সহযোগিতা এবং আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবে। এই ‘সুলতানের দেশে’ যার প্রতিফলন।