এই বইয়ের দশটি প্রবন্ধের কেন্দ্রে আছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, জন্ম যার দুইশ বছর আগে এবং যার আকাঙ্ক্ষা ছিল বঙ্গদেশে একটি মৌলিক সামাজিক পরিবর্তন আনবার। বিদ্যাসাগরকে সমাজ-সংস্কারক বলা হয় তিনি কিন্তু নিজেকে যুক্ত করেছিলেন তার চেয়েও বড় একটি কাজে সেটি সংস্কারের নয়, পরিবর্তনের বলা যায় সামাজিক বিপ্লবের। পরিবর্তনের পথে বড় বড় অন্তরায় ছিল দাঁড়িয়ে। দেশ ছিল পরাধীন, সমাজ ছিল পশ্চাৎপদ সংস্কৃতিতে বিস্তর ছিল সামন্তবাদী পিছুটান। পরিবর্তনের জন্য বিদ্যাসাগর ভরসা করেছিলেন শিক্ষার ওপর। সে-শিক্ষা অবশ্যই হওয়া চাই মাতৃভাষার মাধ্যমে, এবং তার জন্য দরকার পড়বে উৎকৃষ্ট সাহিত্যের। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য রচনা করেছেন। তাঁর সেই সাহিত্যকে কেউ কেউ পাঠ্যপুস্তকসুলভ বলে মন্তব্য করেছেন; কিন্তু বিদ্যাসাগররচিত সাহিত্য ছিল অত্যন্ত উন্নত মানের, এবং আরও বেশী যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলাে ওই সাহিত্য পথপ্রদর্শনের দায়িত্ব পালন করেছে পরবর্তী সাহিত্যিকদের জন্য। বিদ্যাসাগরের একটি সুস্পষ্ট ও স্থির দার্শনিক অবস্থান ছিল সেটি ছিল ইহজাগতিক। আর সে-ইহজাগতিকতা প্রসারিত ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা পর্যন্ত। ধর্মকে তিনি ব্যক্তিগত আচার-বিশ্বাসের ব্যাপার মনে করতেনম এবং ধর্মকে সামাজিক নিপীড়নের কাজে ব্যবহারের বিরুদ্ধে ছিলেন, দৃষ্টিভঙ্গিটা ছিল গণতান্ত্রিক।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম. ১৯৩৬) পেশায় সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অঙ্গীকারে লেখক। এই দুই সত্তার ভেতর হয়তো একটা দ্বন্দ্বও রয়েছে, তবে সেটা অবৈরী, মোটেই বৈরী স্বভাবের নয়। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, অবসরগ্রহণের পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রফেসর এমেরিটাস হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি শিক্ষা লাভ করেছেন রাজশাহী, কলকাতা, ঢাকা এবং ইংল্যান্ডের লীডস ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখার কাজের পাশাপাশি তিনি ‘নতুন দিগন্ত’ নামে সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। তার গ্ৰন্থসংখ্যা আশির কাছাকাছি। তার অকালপ্রয়াত স্ত্রী ড. নাজমা জেসমিন চৌধুরীও লিখতেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।