আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধি যেমন হয় তেমনি জাগতিক উন্নয়নও তার অনুসারী হয়। আধ্যাত্মিক উন্নয়ন ছাড়া মানুষের যেমন মানসিক বিকাশ সম্ভব হয় না তেমনি স্রষ্টাকে পূর্ণরূপে উপলব্ধিও করা যায় না। আত্মার শক্তি বিকাশের জন্য সব সময়ই প্রয়োজন অনুধ্যান বা একনিবিষ্ট চিন্তা ও ধ্যান জ্ঞান। ‘অভিচিন্তন’ গ্রন্থটি সে লক্ষে একটি অভিনব সংযোজন। ‘অভিচিন্তন’ এর মাধ্যমে দর্শন শাস্ত্রের একটি অমূল্য সংযোজন প্রকাশনার অভিযাত্রায় সংযুক্ত হয়েছে। দর্শনের আলোকে ও আধুনিক মনোবিজ্ঞানের আলোকে অভিচিন্তন গ্রন্থটি উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে স্বজ্ঞানলব্দ জ্ঞান, অভিচিন্তনে কুরআনের রীতি, ধ্যানমগ্নতা, ঈমান-বিশ্বাসের গভীরতা, মানসিক কেন্দ্রীকরণের সক্ষমতা, বস্তুসত্তা, অদৃশ্য বিষয়ে চিন্তা মগ্নতা, জাগতিক নিয়মে অভিচিন্তন-এর ন্যায় বিষয়গুলো এ গ্রন্থে উপস্থাপন করা হয়েছে। অনুসন্ধিৎসু পাঠক, ধ্যানমগ্নতায় হারিয়ে যাওয়া অভিচিন্তক এ গ্রন্থ পাঠে নিজের আধ্যাত্মিক উন্নয়ন সাধনে অনেক বেশী উপকৃত হবেন। আটটি অধ্যায়-সম্বলিত পুস্তকটি মানবিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে ইমান, উচ্চতর আত্মার মূল্যবোধের সেবা প্রদান যে সম্ভব, তার প্রোজ্জ্বল উদাহরণ, একই সঙ্গে মানবসেবারও। পুরনো চিন্তার পিছুটান ও আধুনিক চিন্তার দাসত্ব থেকে মুক্ত মুসলিম বিশেষজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবীগণ যদি পুনরায় কুরআন-সুন্নাহকে আলোকবর্তিকা হিসাবে ধরে এর চর্চায় নিবিষ্ট হন; তাহলে তাদের জন্যই সমন্বিত হবে ইমান ও ওহির জ্যোতি, বুদ্ধি ও প্রকৃতির জ্যোতি।
অধ্যাপক, গবেষক, মনোবিজ্ঞানী হিসেবে ড. মালিক বদরী’র নাম সুদানে সুপ্রসিদ্ধ । তিনি একাধারে মনোবিজ্ঞানের পাঠদান, গবেষণা, রচনা ও চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন। তাকে আধুনিক ইসলামি মনোবিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করা হয়। তিনি ১৯৩২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নীল নদের তীরে রুফা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা পণ্ডিত শেখ বাবিকর বদরী সুদানের ইতিহাসে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, যিনি দেশটিতে নারী শিক্ষার প্রসারে পথপ্রদর্শক এবং ১৯০৭ সালে আহফাদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামি সংস্কৃতি, ইসলামি মূল্যবোধ ও মানব-প্রতিভার প্রতি তাঁর গভীর আস্থার দরুন তিনি এই মতবাদ-মতাদর্শের অগ্রগণ্য পুরুষ। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে মানব ও তার আচরণের পাঠ-গবেষণায় তাঁর অসংখ্য অনুসারী ও শিষ্য বিদ্যমান, যারা ঐতিহ্যবোধ ও আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয় সাধনে নিবেদিতপ্রাণ । এ পর্যন্ত তিনি অসংখ্য মানসিক সমস্যা ও ব্যাধির নিরাময়ে বিশুদ্ধ ইসলামের একান্ত উপকারী ঔষধ-পথ্য ব্যবহার করে সফল হয়েছেন। কারণ এতে রয়েছে ইমানি স্পর্শ, প্রভূকেন্দ্রিক ভাবার্থ, বাস্তববোধের প্রতীক, মানবিক চরিত্র-শিষ্টাচার এবং শরিয়ার হুকুম নির্দেশনা। মালেক বদরী মনোবিজ্ঞানের একজন বিশিষ্ট ও প্রভাবশালী সুদানী অধ্যাপক। তিনি মনোবিজ্ঞান, সাইকোথেরাপি, ইসলামিক সাইকোলজি এবং ক্লিনিকাল হিসাবে মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তুরস্কে এএমএসএস ইউকে ২০১৬ লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। অধ্যাপক মালিক বদরী ১৯৫৬ সালে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন, ১৯৫৮ সালে লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৬৭ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে বিশেষায়িত ডিগ্রি ছাড়াও ১৯৬১ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পিএইচডি করার পর লন্ডনের মিডলসেক্স হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড নিউরোলজি বিভাগে বৈজ্ঞানিক গবেষণা উপস্থাপন করেন বদরী। তিনি কর্মজীবনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে: ১৯৬২ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতে সহকারী অধ্যাপক, ১৯৬৫ সালে জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর এবং প্রধান। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ওমদুরমান ইসলামিক ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, গাইডেন্স এন্ড সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং ইউনিট এর পরিচালক, মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ইবনে খালদুন চেয়ারের বিশিষ্ট অধ্যাপক, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইসলামিক সাইকোলজি এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ছিলেন। ড. মালিক বদরী আরবী ও ইংরেজি উভয় ভাষায় অনেক বই ও গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। ইংরেজিতে প্রকাশিত তার গবেষণাপত্রগুলির মধ্যে রয়েছে: ‘ইসলাম এন্ড এনালাইটিক্যাল সাইকোলজি’, ‘ইসলাম এন্ড অ্যালকোহলিজম’ এবং ‘ দ্য ক্যাটাসট্রফি অব এইডস’। তাঁর বই ‘দ্য ডিলেমা অব মুসলিম সাইকোলজিস্টস’, ‘কনটেমপ্লেশন: অ্যান ইসলামিক সাইকোস্পিরিচুয়াল স্ট্যাডি’ এবং ‘সাসটেন্যান্স অব দ্য সোল’ ছিল ইসলামী মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মৌলিক প্রকাশনা। সুদান, সৌদি আরব, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সমগ্র পশ্চিমা ও মুসলিম বিশ্বে তার বিশেষায়িত কাজের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।