মহান আল্লাহ তাআলা ইসলামের খেদমতের জন্য হজরত হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত শাহ আশরাফ আলি থানবি রহ.-কে যে তাওফিক দান করেছেন সে সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। তিনি যখন মুসলমানদের অবস্থা দেখলেন যে, ভুলে যাওয়া, অবহেলা এবং অমনোযোগিতার কারণে ইসলামি শরিয়তের অনেক বিষয়াদি পরিত্যাজ্য এবং দৃষ্টির বাইরে চলে যাচ্ছে। তখন তিনি আল্লাহ তাআলার রহমতে দীনকে পরিমার্জন এবং পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীনের পুনঃসংস্করণ, দীনের বিভিন্ন দিক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মুসলমানদের সংশোধন ও পরিশুদ্ধ করার জন্য স্বীয় কলম মোবারক চালু করেন। অন্যান্য সংস্কারের মতো সমাজ সংস্কারও তাঁর আলোচনা এবং লেখনীর এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ছিল। এই প্রয়োজনকে সামনে রেখে সামাজিক কুসংস্কার ও অসঙ্গতি দূর করার লক্ষ্যে ‘আদাবুল মুআশারাত’ নামক কিতাবটি রচনা করে তিনি এই অতীব প্রয়োজন পূরণ করেন। যাতে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়াদি যেমন, সালাম-কালাম, সাক্ষাত, সেবা-শুশ্রƒষা, চিঠিপত্র, আতিথেয়তা ও মেহমানদারি, সমাবেশ ও অনুষ্ঠান, লেনদেন, হাদিয়া, সুপারিশ, শিক্ষা-দীক্ষা, উস্তাদ ও পিতা-মাতা এবং দৈনন্দিন জীবনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়াদির ব্যাপারে ইসলামি বিধি-বিধানকে সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন। হজরত মাওলানা নাসিরুদ্দিন সাহেব কিতাবটিকে অধ্যায় আকারে সুবিন্যস্ত করেছেন। সেই সাথে হজরত থানবি রহ. এর বিভিন্ন ওয়াজ এবং মালফুজাত হতে আরও অনেক বিষয় সংযোজন করেছেন। সুতরাং বলা যায় যে, এটি উল্লিখিত বিষয়ে একটি চমৎকার কিতাব।
(২ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৮ – ২৪ মে ১৯৮২) তিনি ছিলেন দেওবন্দি ধারার একজন হানাফি পণ্ডিত। তিনি হাদিসের বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তার চাচা মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি ছিলেন সংস্কারমূলক আন্দোলন তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ফাজায়েলে আমল নামক গ্রন্থের লেখক। এটি উর্দুতে লিখিত হলেও অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে।[১][২][৩] তার জীবনীগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে হায়াতে শায়খুল হাদিস ও আপবীতি। মুহাম্মদ জাকারিয়া ১৮৯৮ সালে কান্ধলা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া। গাঙ্গোহ নামক স্থানে তিনি তার পিতার মাদ্রাসায় দশ বছর পাঠগ্রহণ করেন। ১৯১০ সালে তিনি মাজাহির উলুম শাহারানপুর মাদ্রাসায় শিক্ষালাভের জন্য আসেন। এই মাদ্রাসা দারুল উলুম দেওবন্দের সাথে সম্পর্কিত ছিল। তিনি তার পিতা ও মাওলানা খলিল আহমেদ শাহারানপুরির কাছ থেকে হাদিস শিক্ষালাভ করেন। ১৯১৫ সালে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি এখানে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় দেওবন্দ আন্দোলনের প্রসারে তার ভূমিকা রয়েছে।