শহীদ মিনার দৃশ্যত ভাষা শহীদের স্মৃতির মিনার, কিন্তু শহীদ মিনার এ দেশের সব শহীদের স্মৃতির মিনার। শহীদ মিনার এ দেশের সব সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস।শহীদ মিনার বায়ান্নো, বাষট্টি, ছেষট্টি, উনসত্তর, সত্তর, একাত্তরের সংগ্রামের আর শত, সহস্র, লক্ষ শহীদের প্রতীক। শহীদ মিনার বাঙালির জাতিসত্তার জাগরণের প্রতীক, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক। শহীদ মিনার বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতীক। তাই বাঙালির শত্রু বারবার এ মিনার ধ্বংস করতে চেয়েছে। শহীদ মিনার হাজার বছরের বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য, বাংলা বর্ণমালার প্রতীক। শহীদ মিনার আবহমান বাংলা ও বাঙালির মহান ঐতিহ্যের প্রতীক। শহীদ মিনার বাঙালির সংস্কৃতির প্রতীক। শহীদ মিনার সংগ্রামের প্রতীক। শহীদ মিনার সৃষ্টির প্রতীক। শহীদ মিনার পুরনো রাষ্ট্র ও সমাজ ভেঙ্গে নতুন রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার প্রতীক। শহীদ মিনার অন্যায় শাসন ও শোষণ অবসানের সংগ্রামের প্রতীক, শহীদ মিনার অর্থসামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রতীক। শহীদ মিনার মানুষের মিনার, শহীদ মিনার সকল মানুষের জন্য উম্মুক্ত। ধর্ম, সম্প্রদায়, শ্রেণি, পেশা নির্বিশেষে মানুষের মিলন তীর্থ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। কিন্তু শহীদ মিনার শুধু অতীতের ত্যাগ ও তিতিক্ষার প্রতীক নয়, শহীদ মিনার বর্তমানের সংগ্রামের প্রতীক। শহীদ মিনার ভবিষ্যতের আশার প্রতীক। অমর ভাষা শহীদদের স্মৃতি বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শহীদ মিনার। এ মিনার এখন শুধু আর ইট-পাথরের তৈরি নয়, এ মিনার বাঙালির সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, তার গভীরতম সত্তা। নিঃসন্দেহে শহীদ মিনারের পূর্বাপর ইতিহাস ও আলেখ্য নিয়ে এক উজ্জ্বল ও অনন্য সংগ্রহ এই বই।
রফিকুল ইসলাম (১৯৪৩-) চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়া করেন। ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদনা করেন আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান-অ্যান আরবর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টরে। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বন্দীশিবিরে নির্যাতিত হন। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও নজরুল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। ‘নজরুল নির্দেশিকা’, ‘ভাষাতত্ত্ব’, ‘নজরুল জীবনী’, ‘শহীদ মিনার’, ‘বাংলা ভাষা আন্দোলন’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর’, ‘অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু কলোকোয়্যেল বেঙ্গালি’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ তিনি আরো অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।