গণমাধ্যমের মনোযোগ লাভ বা ট্রিটমেন্ট থেকে বিষয়ের গুরুত্ব বোঝা যায়। পাঠকের আগ্রহ, বিষয়ের তাৎপর্য ও গাম্ভীর্য এবং জনস্বার্থ বিবেচনায় গণমাধ্যমে আধেয় বা বিষয়বস্তুর আগ-পিছ, আকার-আকৃতি নির্ধারিত হয়। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই অপ্রত্যাশিত আচরণ করলেও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অনুপস্থিতিতেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিস্মৃত স্মৃতিরক্ষা, অবিস্মরণীয় অবদানকে স্মরণ এবং ধ্রুপদী আদর্শকে সমুন্নত রাখতে নীরব বিপ্লব করে গেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকলেও গণমাধ্যম জাতীয় শোক দিবস ও শোকাবহ আগস্টে মাসব্যাপী সংবাদ ও লেখা প্রকাশ করেছে। যা এ দেশে আর কারও স্মৃতির উদ্দেশে হয়নি বা গণমাধ্যম করেনি। ব্যক্তির গুরুত্ব ও মহিমা বোঝার একটি মানদ- হলো গণমাধ্যমের ট্রিটমেন্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির যে শিরোপা, তার যথার্থতা আমরা এখানেও খুঁজে পাই। গণমাধ্যমের ট্রিটমেন্টের মতো আপেক্ষিক বিষয়টির গুরুত্ব অপরিসীম। সেটিকে ধারণ করার জন্যই আমাদের এ প্রয়াস। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গত শতকের নবম দশকের শুরু থেকেই পত্রপত্রিকায় হাতখোলা লেখালেখির সুযোগ উন্মুক্ত হয়। তখন থেকেই পত্রপত্রিকার নিয়মিত ও বিশেষ প্রকাশনায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মূল্যবান ও তথ্যবহুল লেখা ছাপা হয়ে আসছে। যার সবই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অথচ সংকলিত ও সংরক্ষণের বাইরে রয়ে গেছে। আমরা সমুদয় লেখাকে গ্রন্থনার মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে না পারলেও প্রধানত জাতির পিতার চল্লিশতম শাহাদাত বার্ষিকীতে প্রকাশিত জাতীয় গণমাধ্যমের নিবন্ধগুলো সংকলন করে সংবাদপত্রের পাতায় জাতির পিতাকে তুলে ধরার উদ্যোগের নির্যাস নিতে পারব। দেশে ও বিদেশে অবস্থানকারী বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিটি পেশার অন্যূন এক বা একাধিক ব্যক্তিত্ব, তরুণ-প্রৌঢ়-বয়োজ্যেষ্ঠজন, নারী-পুরুষ, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লিখিত নিবন্ধ নির্বাচন করে সর্বজনীনতা অক্ষুণœ রাখতে সচেষ্ট থেকেছি। বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়ে লিখিত নিবন্ধ সংকলন করে সম্পূর্ণতা আনয়নেও সচেতন থেকেছি। আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শের অনুবর্তী নয় অথবা রাজনৈতিকভাবে মতভিন্নতা পোষণকারী গণমাধ্যম এবং নিবন্ধকারের লেখাও উপেক্ষা করা হয়নি। বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি যেহেতু অবিচ্ছেদ্য, অনেক লেখায় জাতিগত সীমাবদ্ধতা বা সংকীর্ণতার আলোচনা স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর বিশালত্বের পরিপূরক হয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে এসে পড়েছে। নির্মেদ করে তা বাদ না দেয়ার কারণ হলো বাঙালি জাতির চিরদিনের অভিভাবক যে শেখ মুজিবুর রহমান সেই অনুহ্য উচ্চারণটিই বজায় রাখা। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর দেশভাবনা ও অনুসৃত নীতিও ছিল সময়ের চেয়ে অগ্রসর, কিন্তু গণমনস্তত্ত্বের অগ্রসরমানতা হয়তো তার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ ছিল না। সেই পার্থক্যবোধের সুযোগটিই বারবার গ্রহণ করে জাতির পিতার প্রতি অনুদার সমালোচকরা। এ গ্রন্থের নিবন্ধগুলো একযোগে তারই যুক্তি খ-ন করেছে বলে আমাদের বিশ্বাস।