ভূমিকা জীবজন্তু নিয়ে নীতিগর্ভ গল্প-বলিয়েদের সম্রাট আখ্যা দেওয়া যেতে পারে এমন ব্যক্তি যদি কেউ থাকেন তবে নি:সন্দেহে বলা যায় তিনি হচ্ছেন পাশ্চাত্যের ঈশপ। একমাত্র পাচ্যের বিষ্ণুশর্মার সঙ্গেই তার তুলনা করা যেতে পারে। ঈশপ গল্প বলিয়ে ছিলেন কিন্তু লিখিয়ে নন। দেশের পূর্ব প্রচলিত নীতিমূলক গল্প এবং তার স্বরচিত গল্প তিনি এমন সুন্দর ভঙ্গিতে বলতেন যে লোকে মুগ্ধ হয়ে শুনতো। ঈশপ গল্প বলিয়ে হিসাবে এত বিখ্যাত হলেও তার সত্যিকার পরিচয় দেওয়া সহজ নয়। কোন কোন পণ্ডিতের মতে, ঈশপ বলে কোন সত্যিকার ব্যক্তির অস্তিত্ব ছিল না। দেশে প্রচলিত নীতিমূলক গল্পগুলো ঈশপ নামে এক কাল্পনিক ব্যক্তিত্বে আরোপ করা হত। আবার অন্যান্য পন্ডিতদের মতে, ঈশপ বলে সত্যিই এক ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর জীবিতকাল খৃষ্টপূর্ব ৬২০-৫৬০ অব্দ। তিনি গ্রীসের Xanthus নামক এক ধনী বণিকের গৃহে ক্রীতদাস ছিলেন। তিনি দেখতে বিকলাঙ্গ কদাকার হলেও বুদ্ধির দীপ্তি ,বাচনভঙ্গি এবং বৈদগ্ধে ছিলেন অসাধারণ। তার প্রভু Xanthus তার সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে দা্সত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। জীবনের শেষের দিকে তিনি লিডিয়ার রাজা ক্রুসাস এর আমন্ত্রণে তার রাজসভায় গিয়ে সভাসদরূপে বাস করতে থাকেন। রাজা তাকে বিশেষ সম্মান করতেন। কথিত আছে রাজা ক্রুসাসা একবার তাকে ডেলফীর এ্যাপোলো মন্দিরে পাঠান, ঈশপ সেখানকার দৈববাণী নিয়ে কিছু তামাশা করায় ডেলফীর লোকজন তার উপর ক্রুদ্ধ হয়ে একটা পাহাড়ের চুড়া থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তাকে হত্যা করে। আগেই বলেছি ঈশপ নিজে কোন গল্প লিখে যান নি। তার বলা গল্প লোকসমাজে মুখে মুখে চালু ছিল। বেশ কিছুকাল পরে ব্যাব্রীয়াস নামে এক গ্রীক গল্পগুলো লিপিবদ্ধত করেন। দুর্ভাগ্যক্রমে এগুলোও হারিয়ে যায়। সৌভাগ্যের কথা ১৮৪৪ খৃষ্টাব্দে ব্যাব্রীয়াস এর লেখা ঈশপ এর এই গল্পগুলোর একটি সংকলন মাউন্ট এ্যাথস এর একটি মঠে পাওয়া যায়। তখন থেকে এই গল্পগুলো পৃথিবীর প্রায় ২৫০-এরও বেশী ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আমাদের প্রকাশিত এই গ্রন্থে ঈশপের নামে প্রচলিত সকল গল্পগুলোই সন্নিবেশিত হল। প্রকাশক