জীবনী ও আত্মজীবনীর মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। কোনো কোনো সময় ব্যক্তি স্বয়ং আত্মজীবনী রচনা করেন, যেখানে থাকে তাঁর রোমাঞ্চকর স্মৃতিচারণ ও শ্রুতিমূলক আখ্যান। অনেক সময় আত্মজীবনী হয়ে পড়ে আত্মপ্রশস্তি, যেখানে ব্যক্তি নিজের গোচরে বা অগোচরে নিজেই আবির্ভূত হয়। অনন্যসাধারণ রূপ-গুণ সমন্বিত অপরূপ মহান ব্যক্তিত্ব নিয়ে অন্যদিকে মহান ব্যক্তিদের জীবনী রচিত হয়, যেখানে জীবনী-লেখক প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে মহৎ ব্যক্তির কর্মময় জীবন সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। কেউ যখন আত্মজীবনী লেখেন, তখন তাঁর মধ্যে অনেক বিষয়ই হয়তো ক্রিয়াশীল থাকে, তবে দু'টো বিষয় নিশ্চিতভাবেই থাকে এর একটি হচ্ছে নিজেকে জানা, অন্যটি হচ্ছে নিজেকে জানানো কাকে জানানো? জানানো- আত্মজীবনী-পাঠকদের এসবের পাশাপাশি আরো যে দু'টো ব্যাপার কাজ করে। তার একটি হলো আত্ম-আবিষ্কার, অন্যটি আত্ম-উন্মোচন বলা যেতে পারে, আত্ম-আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে আত্ম-উন্মোচনের পর্বটিও ঘটতে থাকে, যে-কারণে আত্মজীবনী-লেখককে ঘটনার তাৎপর্য বোঝাতে গিয়ে অতীতের কথা বলতে বলতে অনেক সময় বর্তমানেও চলে আসতে হয়। এটি ঘটানোর মধ্যেই লেখকের কৃতিত্ব নির্ভর করে। 'কিছুই সহজ নয়' এ-কথাটি মনে রেখেও বলা যায়, আত্মজীবনী লেখার কাজটি সে কারণেই কঠিন, কারণ সবার পক্ষে ওই আত্ম-উন্মোচনের কাজটি ঠিকভাবে করতেপারা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সংগত কারণেই প্যাসক্যাল ( Roy Pascal) বলেছিলেন, আত্মজীবনীর সার্থকতা নির্ভর করে 'The seriousness of the author, the seriousness of his personality and his intention in writing'.