প্রকৃতির জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে তাল ঠুকছে সাহিত্য, আধুনিক কালপর্বের অন্তিমে এখন চলছে উত্তরাধুনিক সাহিত্য ঋতু, ভাব শিল্পের শুল্ক মওসুম। কবিতা আজকাল হৃদয়ের ভাবাবেগ মিশিয়ে লিখবার বস্তু নয়, কবিতা এখন ছেনি বাটালে নির্মিত কাঠ শিল্প। পাঠকরা কবিতা হৃদয়ঙ্গম করতে অপারগ হয়ে ছেড়ে দেন কাঠঠোকরার ঠোঁটের আগায়। পোস্টমর্ডানিজমের ছুতোয় দুর্বোধ্য বাণী বন্দনার আগে আমরা কি একবার ভেবে দেখবোনা? মানুষের হাসি কান্না অনুরাগ-বিরাগ আপোস-প্রতিরোধ, এখনো আদিম ও অপরিবর্তিত? উত্তর আধুনিক কবি ঋষি মণীষীরা কাঁদলে যদি চোখ বেয়ে পানির বদলে পাথর পড়ে তবে তাই হোক। আশার কথা, বর্ণিত কাব্যগ্রন্থ ‘মনের সাতকাহন' দুর্বোধ্য বাণী বন্দনার দুষণ মুক্ত, এর সকল কবিতাই সোজা সরল প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত। কবির সহজ বাণী বিবৃতির আংশিক উদ্ধৃতি দিলাম আমার বক্তব্যের সপক্ষে: ঐ পারেতে সুখ কবিতায় কবি লেখেন-- এই পারেতে কষ্ট ভীষণ ঐ পারেতে সুখ/যাবো চলে ঐ পারেতে ঘুচবে মনের দুখ/ তল্পিতল্পা বেঁধে এসে খেয়ার পানে চাই/ও মাঝি ভাই পার করে দাও গাঙের ওপার যাই/ ঐ পারেতে গিয়ে আমি বাঁধবো সুখের ঘর/দোহাই মাঝি পার করে দাও সইছে না আর তর / এই সহজ সরল পঙক্তিমালা পড়লেই আমাদের সেই আদি ও অকৃত্রিম কাব্যাংশ মনে পড়ে যায়, নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস /ওপারেতে যত সুখ আমার বিশ্বাস? এই আদি ও সাম্প্রতিক কবিতাংশ বুঝতে পাঠকের কোন পণ্ডিত ও বিজ্ঞ বিদগ্ধজনের সহায়তা নিতে হয়না নিজেই বুঝে নিতে সক্ষম হন, এই রূপক ও এপার ওপার তুলনার মাঝে সুখসন্ধানী মানবজীবন ও মনের এক অস্থির অনিশ্চিত আকাঙ্ক্ষার বিকার লক্ষণীয়। পাঠকের বোধগম্য ও মনোযোগ আকর্ষণের বাক্য বিস্তারই খাঁটি কবিত্বের লক্ষণ। এটি কবি হাজেরা কোরেশী অপির, প্রথম কাব্যগ্রন্থ হলেও কবিতা লেখায় কিন্তু তিনি নবাগত নয়, দীর্ঘ দুই যুগের ও বেশি সময় আগে এই কবির কাব্যচর্চায় পদার্পণ, দৈনিক মাসিক সাপ্তাহিক পত্রিকা ছাড়াও অসংখ্য লিটলম্যাগে তার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে, গুছিয়ে রাখা ও সংরক্ষণের অবহেলায় প্রথম দিকের অনেক কবিতাই আজ বিস্মৃতির অতলে। সাম্প্রতিক সময়ে কবির কলম আবারো সক্রিয়, অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে কবির কবিতা নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে, বাংলাভাষী কবি ও কবিতার আন্তর্জাতিক আসর 'বাংলা কবিতা ডটকমের' কবি একজন নিয়মিত সদস্য, সেখানে কবির কবিতা বেশ পাঠক প্রিয় ও প্রশংসিত। আমরা আশাবাদী কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'মনের সাতকাহন' ও পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে বহুল প্রচার লাভ করবে।