আকাশে রামধনুর জাদুরঙে মোহিত হন না, এমন মানুষ বুঝি নেই। তবে এতে জাদু নেই ছিটেফোঁটা, আছে শুধু বিজ্ঞান। আর বিজ্ঞানে বিষ্ময় আছে। বিজ্ঞানের সেই গভীরে মানুষকে তার অদম্য কৌতূহলই টেনে নিয়ে যায়। প্রকৃতিতে অমিল অনেক। এমন বিষম বিশ্বকে বিশদ বুঝতে বিজ্ঞানীরা তার অন্তর্লীন সুরটুকু খুঁজে বেড়ান। যেমন, বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, তাপ, এক্স-রশ্মি, বেতার তরঙ্গ, মহাজাগতিক রশ্মি সবারই সাধারণ এক বৈশিষ্ট্য আছে। তা হল, এরা সবাই ঢেউয়ের মতো এঁকেবেঁকে দৌড়ায়। তরঙ্গের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী যদি এদের সাজানো হয়, তবে দেখা যায়, বেতার তরঙ্গ সবচাইতে লম্বা আর মহাজাগতিক রশ্মি সবচাইতে খাটো দৈর্ঘ্যের। এসব তরঙ্গদের বিজ্ঞানীরা তড়িৎচুম্বকীয় বর্ণালী বলেন। বর্ণালীর মধ্যে কেবল আলোর অংশটুকু আমরা দেখি, বাকিরা অদেখা রয়ে যায়। তবু আমরা কতটুকু জানি? দিনের পর দিন আমরা আলোর সাথে একাত্ম হয়ে থাকি। তবু আমরা কি আলোকে জানি? আলো কণা, না তরঙ্গ? আলো কোথা হতে আসে, কোথায়ই বা চলে যায়? পর্যবেক্ষণ আর পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা কিছু কিছু জেনেছেন ঠিকই, কিন্তু কেউ এখনও সঠিক জানেন না, আলো কী? ছোট পড়ুয়াদের অমিশেল মনে এমন কত না জিজ্ঞাসা! জানার জন্যে জিজ্ঞাসু এমন পাঠকের মনে বিজ্ঞান-ভাবনা, বিশেষ করে আকাশ-ভাবনা তাই খুবই স্বাভাবিক। এদের কথা মাথায় রেখে রচিত হয়েছে এই গ্রন্থ । আকাশ আমরা সকলেই দেখি। চলতে ফিরতে দেখি আবার সময় করেও দেখি। কিন্তু কাকে আকাশ বলা হবে? এটাই একটা লাখ টাকার প্রশ্ন। মেঘকে আকাশ বলা যাবেনা; রামধনুকে আকাশ বলা যাবে না; আকাশের নীল রঙকে আকাশ বলা যাবে না; চন্দ্র, সূর্য, তারা, এদেরও আকাশ বলা যাবেনা। তাহলে কি যে স্থানে এসব কিছু আছে তাকেই আকাশ বলে। একটা বাংলা অভিধান খুলে দেখা গেল কোনো ঝামেলায় না জড়িয়ে শুধু আকাশের কয়েকটা সমার্থ শব্দ দিয়েছে। একটা ইংরেজি অভিধানে আকাশের ব্যাপারে বলছে, পৃথিবী থেকে ওপর দিকে তাকালে যে স্থানে চন্দ্র, সূর্য এবং তারা দেখা যায়।” কিন্তু আকাশ কি শুধু ওপর দিকেই আছে? বাংলাদেশের সাপেক্ষে আমেরিকা পৃথিবীর উল্টো দিকে। সেখানেও ওপর দিকে তাকালে চন্দ্র, সূর্য, তারা। তবু বাংলাদেশের ওপরদিক আর আমেরিকার ওপরদিক এক দিকে নয়, বরং উল্টো দিকে। আসলে গোটা পৃথিবীকে ধরলে ওপরদিকের কোন বাছবিচার নেই। সব দিকেই ওপর দিক। আকাশ পৃথিবী থেকে ওপর দিকে না বলে সহজ করে বলা যায় পৃথিবীটাই আকাশের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর পৃথিবীর ওপর জীব জগতের বিবর্তন, উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে সভ্যতার বিকাশ, আজকের আমরা, ভবিষ্যতের ইতিহাস, সব বৃত্তান্তই আকাশে ঘুরতে ঘুরতে। আমা পৃথিবীর ওপর দাঁড়ালেও পৃথিবীর দাঁড়াবার কোন জায়গা নেই। আমা করি এত কথার পরে আকাশ কাকে বলা হবে তার কোনই মীমাংসা হয়নি। কিন্তু তাতে কি? তার জন্যে আমাদের আকাশ দেখা তো কেউ আটকাতে পারবেনা । এসব সমস্যা পণ্ডিতদের জন্যে তোলা থাক। বাজে কথা ছেড়ে আমরা বরং আকাশ দেখায় মন দিই।
সৌমেন সাহা ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে এই জেলাতেই। খুলনার স্বনামধন্য সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও সরকারি সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি পি.সি. কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিজ্ঞান , প্রযুক্তি ও গণিতের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল শুরু থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই পাড়ি জমান সুদূর ইংল্যান্ডে। সেখানকার লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লন্ডন কলেজ অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড কম্পিউটিং বিভাগ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমাসহ বি.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন। সৌমেন সাহা নিয়মিত বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, বিশেষত বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, মাসিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত লেখার সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। তাঁর পেশাগত জীবনেও তিনি বিজ্ঞান গবেষণার সাথে জড়িত। খুলনার ঐতিহ্যবাহী প্রাণিক বিজ্ঞানাগার খুলনার কেন্দ্রীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। জাতীয় বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রকল্পের উদ্ভাবনের কারণে তিনি পুরস্কৃতও হয়েছেন। পাঠক সমাদৃত সৌমেন সাহা এর বই সমূহ হলো ‘প্রাচীন ভারতীয় গণিত ও জ্যোতির্বিদ’, ‘বৈদিক গণিতের পরিচয়’, ‘পাগল করা গণিত’, ‘যন্ত্ররা যেভাবে কাজ করে’, ‘বিজ্ঞানের জানা অজানা কথা’, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের সহজ পাঠ’, ‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে’ ইত্যাদি। তাঁর লেখার মূল বিষয়বস্তু হলো বিজ্ঞান, গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান। সাধারণ পাঠকদের কথা মাথায় রেখে রচিত সৌমেন সাহা এর বই সমগ্র খুব সহজ ও সাবলীলভাবে এই জটিল বিষয়গুলো উপস্থাপন করে। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিতে আত্মমগ্ন এই লেখক বর্তমানে ঢাকার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।