বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের আত্মপরিচয়ের নাম, তাঁর বীরত্বপূর্ণ অমূল্য অবদানে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শে বাঙালি জাতি আজ তাবৎ বিশ্বে উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে, মানবিক, সামাজকি অগ্রগতিও অর্থনৈতিক সাফল্যের অনন্য এক নজির স্থাপন করেছে। বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশ নিমজ্জিত হয় এক অনিশ্চিত গভীর অন্ধকারে। ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের রঞ্জিত প্রিয় মাতৃভূমি মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছিল পঁচাত্তরের ভয়াবহ নির্মম ট্রাজেডির পর থেকে। সে ভয়ানক আঁধারে আলোর দিশারী হয়ে ভিনদেশের দীর্ঘ নির্বাসন থেকে প্রিয় স্বদেশ ভূমিতে যেদিন ফিরে এলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, আকাশ ভেঙে পড়েছিল আবেগের শ্রাবণধারায়। লক্ষ লক্ষ বঙ্গবন্ধু সৈনিকের আনন্দ অশ্রুতে ভাসমান রক্তাক্ত মানব জমিন। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে কম্পিত নগরের সমস্ত গৃহলোক। সেদিন মনে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর পুনজন্ম বুঝি আজ। এ দেশের মানুষের জন্য স্বাধীনতার জন্য নির্যাতিত নিপীড়িত বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রাম করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বছরের পর বছর অন্ধকার কারাগারে বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। একাত্তরের সাতই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে বিশ্ব বিবেক বিস্মিত হয়েছিল আর মুক্তিপাগল বীর বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার শক্তি ও সাহস পেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কোটি মানুষের কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছিলেন, মানুষের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা বিশ্বাস অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর ধ্যানে-জ্ঞানে বাঙালির মুক্তির আরাধ্য আরাধনায় নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। এসব অনেক কারণেই একজন শেখ মুজিবুর রহমান বাঙলির পরম শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতার অসামান্য খ্যাতির স্বর্ণচূড়ায় আরোহণ করেছিলেন। বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর ঋণ কোনো কালে শোধ করতে পারবে না।
Safiqur Rahi তারুণ্যের প্রতীক কবি শাফিকুর রাহী জন্মভূমির কাদামাটির কোমল কোল ছেড়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন রাজধানী ঢাকায়। বাংলার অজ অবহেলিত শস্যময় শ্যামল ভূমিতে সৈয়দ বংশের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১ জুন ১৯৬১ সালে ফেনী জেলার দাগনভূঁঞা উপজেলার গজারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা : মো. মোবারক আলী, সাদামাটা এক ভূমিপূত্র, মাতা : কুলসুমন্নেসা, বাংলার চিরায়ত এক স্বপ্নহীনা মুখ। তিনি নয় ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। শিক্ষা : আজো অধ্যয়নরত। তাঁর পৈতৃক নিবাস: ফেনী চেলার দাগনভূঁঞা উপজেলাধীন ৩নং পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত গজারিয়া গ্রাম। দাদা-মিয়া খলিলুর রহমান, দাদী-জুলেখা বেগম। নানা-ভুলু মিয়া, নানী-উলফতুন্নেসা, শাপুয়া গ্রামের অধিবাসী। এই স্বভাবকবি শাফিকুর রাহী শেরপুর জেলার শ্রীবরর্দী উপজেলাধীন ভায়াডাঙা গ্রামের অধিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: মমতাজ উদ্দিন এর পঞ্চম সন্তান মনোয়ারা বেগম কোয়েলির সাথে শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ হন। কবির প্রথম পুত্রসন্তান মারা যায় বিনাচিকিৎসায়, একমাত্র কন্যা সৈয়দা শারফিন জাহান মনন ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। শাফিকুর রাহী সত্তর দশকের শেষের দিকে লেখালেখি শুরু করলেও মধ্য আশিতে লেখক হিসেবে কাগজে কলমে তাঁর আত্মপ্রকাশ। সময়ের শক্তিমান কবি শাফিকুর রাহী বিরহী, প্রেমিক। তাঁর কবিতায় স্বদেশ স্বভূমি আসে বহুধা অভিধায়। তাঁর প্রেম নিখাদ শৈল্পিক কারুকাজে বাধা পড়ে শব্দের ফ্রেমে। এখন তিনি স্বদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল নিপুণ মমতায় ধারণ করেন মননের ঝুলন্ত অলিন্দে, আর এভাবেই হয়ে যান নির্ভেজাল ক্ষুদিরাম। রাহী এই সময়ের কাব্য অরণ্যে মন্ত্রমুগ্ধ শাণিত সুরের বেদনা বিদ্রোহী বিহগ। তাঁর কবিতা পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে সহজেই। লোক-রোমান্টিক এই কবির শব্দ উপমা, স্টাইল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই ব্যত্যয়ের জন্য রাহীকে চেনা যায়, চেনা যায় তাঁর কবিতাকে। তুমুল স্বপ্নবাদী এবং নিখাদ বাঙালি দেশজ কাব্যশিল্পী শাফিকুর রাহী লিখেছেন দীর্ঘসময় ধরে, আপন বৃত্তের যে স্বকীয় অবস্থান নির্মাণ করেছেন তা সময়কে উত্তীর্ণ করে তাঁকে নিয়ে গিয়েছে সুখ্যাতির শিখরে। প্রেম দ্রোহ মানবতার কবি হিসেবেও অর্জন করেছেন খ্যাতির গোলাপ। কবিতার পাশাপাশি শিশু সাহিত্যেও রয়েছে তাঁর প্রশংসিত পদছাপ। একজন আবেগী সংগীত রচয়িতা হিসেবেও কুড়িয়েছেন প্রশংসা। সময়ের সাহসী স্বাপ্নিক কবি শাফিকুর রাহী লিখেছেন অনর্গল। শাফিকুর রাহী স্বপ্নচাষী। মানুষের সুন্দর ও নিরাপদ জীবনের স্বপ্নে গ্রথিত হতে থাকে তাঁর কাব্যের পঙতিমালা। শত দুঃখ, কষ্ট আর যন্ত্রণার পৃথিবীতে বাস করেও রাহী আশাবাদী। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে মাটি ও মানুষকে রক্ষা করার সংকল্পে তাঁর শানিত শব্দমালার প্রকাশ তারুণ্যের দ্রোহী কণ্ঠ। মা বাবার বাঁধন-ছেঁড়া চির অভিমানী রাখাল গৃহবিবাদের কারণে প্রিয় স্বজনের অমানবিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সংঘাত সংঘর্ষকে এড়িয়ে যৌবনের শুরুতেই জন্মভূমির বসতভিটে ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায়। আজো সেই ক্ষোভ ও দ্রোহের অঙ্গীকারে অবিচল তিনি।