উপক্রমনিকা এদেশে যা হবার নয় তাই হঠাৎ করে হয়ে যায়। আর যা হবার দরকার মাথা কুটে মরলেও তা হয়না। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সম্পদ ও পাখি সম্পর্কে প্রামন্য চলচ্চিত্র তাই দীর্ঘকাল তৈরি হতে পারেনি। দেশ স্বাধীন হবার আগে থেকে আমি বু কর্তার কাছে কাকুতি মিনতি করেও ফল পাইনি । স্বাধীনতার পরে কাজী আজাহার আলী সাহেব তথ্য সচিব হলেও তিনি বিশেষ কিছু করে উঠতে পারেনি । কেবল চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা বিভাগের কর্মকর্তাকে বলেছিলেন, সামনের বছরে সুন্দরবনে উপর একটা তথ্য চিত্র তৈরি করার জন্য যেন কিছু করা হয় । কর্মকর্তা ওহাব সাহেব কথাটা মনে রেখেছিলেন বলেই বোধহয় স্বল্প দৈর্ঘ্য ছায়াছবি নির্মিত হতে পেরেছে। বাংলাদেশের বন বিভাগের দ্বিতীয় সম্মেলনের সময় তৎকালীন বন্যা প্রাণূী সংরক্ষক নূর মোহাম্মদ সরকার সাহেব আমাকে বললেন যে, সরকার তৃতীয় পাঁচসালা পরিকল্পনায় তথ্যচিত্র নির্মানের জন্য পনেরো লাখ টাকা বরাদ্দ করেছেন। তিন বছরের টাকা হতে এসছে। সুতরাং কাজ শুরু করা যেতে পারে। আমি বললাম, আর দেরি নয় , আরম্ভ করুন। তিনি কাহিনী লেখার দায়িত্ব আমার ওপর চাপিয়ে দিলেন। লেখার কাজ আরম্ভ করে বিপদে পড়লাম।একবার অঞ্চল ভিত্তিক আবার একবার পশু-পাখি ভিত্তিক লেখা - কেউ এটা পছন্দ করেন আর কেউ তা বাতিল করেন। যাই হোক শেষ পর্যন্ত লেখা ও চিত্র তৈরি করার কাজ একসঙ্গে চলতে লাগল। কিন্তু হাতে যা টাকা তাতে আধ ঘন্টা ছবির অর্ধেকও করা সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত সরকরি চলচ্চিত্র বিভাগে যেতে হলো। সেখানেও খরচ কম নয়। অতঃপর ওহাব সাহেবই উদ্ধার করলেন বিপদ থেকে। তিনি বিভাগের খরচ কেটে বাদ দিয়ে কেবল জিনিসপত্রের জন্য চার্জটাই ধার্য করলেন। যন্ত্রপাতি , লোক-লস্করেরও ব্যবস্থা করে দিলেন। ফলে কাজ আরম্ভ হলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি ছবির শেষ দেখে যেতে পারেননি। হঠাৎ অসুখে পড়ে বিদেশে যেয়ে মানবলীলা সংবরণ করেন। সুতরাং প্রামান্য এই তথ্য চিত্রটি তাঁর বিশেষ অবদান হিসেবেই চিহিৃত হবে। ছবি শেষ হয় হেমায়েত উদ্দিন সাহেবের আমলে । তবে ছবি তোলার কাজ যা করার তা করেছেন বিভাগীয় ক্যামেরাম্যান বাবু, আরশাদ ও আর একজন যার নাম আমি ভুলে গেছি।অবশ্য মুল কাজ করেছেন বন বিভাগের লোকজনরা। লেখা ছাড়াও আমাকে বন বিভাগের সাথে যোগাযোগ রক্ষা এবং বনে যাওয়ার কাজ করতে হয়েছিল। সুন্দরবনে আমি বহুবার গিয়েছি।সুতরাং সেখানকার অনেক জায়গা আমার বিশেষ পরিচিত। ছবি ওঠাতে আমি দু দু বার বনে গিয়ে মাস দেড়েক কাটিয়েছি। এভাবে বহু কষ্টে ছবি তৈরি হয়। কিন্তু যেভাবে কাটা-কাটি করা হয়েছে তাতে ছবি অনেক ক্ষুন্ন হয়েছে। এ বইয়ে যা লেখা হয়েছে সেটা সম্পূর্ন তথ্যভিত্তিক । ঢাকা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ছবি নিমার্ণে অমূল্য সাহায্য করেছেন। তাঁরাও সেজন্য ধন্যবাদের পাত্র। মোঃ তোহা খান ২.২.৯০