ভূমিকা: হিংসা নিন্দা দূর কর, হে মমিন মুলমান! কেন হিংসা দূর করতে হবে? কারণ সুস্পষ্ট। কবি বলছেন, আজাজিল ফেরেশতা মাটি দ্বারা তৈরি আদম (দ) কে হিংসা করে শয়তানে পরিণত হয়েছেন। কত সহজ সরল উপমা। বিশ্বাসের প্রশ্ন ভিন্নতর। বিদ্যমান জ্ঞান এবং সাধারণ্যে স্বীকার্য তত্ত্ব দিয়ে সাধারণ জনমানসে স্থান করে নিয়েছিলেন পাগলা কানাই। বাঙলারে প্রান্তরে- দোতারা হাতে- উদাত্ত গলায় গান গেয়ে বেড়ানো স্বভাব কবি- ক্ষ্যাপাটে কবির গানের পংক্তি বিশেষত: তত্ত্বপ্রধান গানের পংক্তিমালা আকর্ষণের বিন্দু। পণ্ডিতজনের মতে, তিনি ছিলেন স্বল্পশিক্ষিত বা নিরক্ষর কিন্তু তত্ত্বের শৈল্পিক উপস্থাপনা প্রশংসনীয়। একদা সুফিবাদ দ্বারার প্রভাবিত পাগলা কানাই এর বিচরণ ছিল বাউল সাধনার তাত্ত্বিক ও গুহ্য সাধনতন্ত্রে। পার্থক্য হলো এই যে, তিনি সুফি বাউলের মতো আত্মগোপনকারী আত্মানুসন্ধানী নন। তিনি বহির্মুখী- কবিয়াল এবং সংসারী। রবি ঠাকুরের ”ভাব হতে অবিরাম যাওয়া আসা“র মতো তিনি আবার সংসারী হয়েও সংসার বিরাগী কারণ তার ”মরা মানুষ“ দেখে “কুম্ভীর বেহুশ হয়।“ প্রলয় সৃজনের যে অবাক গতিময়তা এবং বিপরীত আচরণ তাই কী পাগলা কানাই এর জীবনধর্ম? লেখাপড়া না করে দার্শনিক তত্ত্ব সম্বলিত ভাব আশ্রয়ী গান রচনা, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে গোর কাফন আর শ্মশানে দাহনকে এক গানে উচ্চারণ আমাদের ভাবনার বিন্দু হয়। প্রবল ভক্তি, পূণ্যময় নিরাসক্তি আর সৃষ্টিকর্তার রহস্যের প্রতি অধিক ঝোঁক বিশিষ্ট ব্যক্তিরাই সুফিবাদের অনুশীলনকারী। ভাবসাধনার সাথে মিশে গিয়েছে বাউল সাধনা, কবিয়াল গায়ক খুঁজে বেরিয়েছেন মানের মানুষকে-সাধন করেছেন মানুষ জমিনের; হিন্দু মুসলমান পুরাণ-আখ্যান নির্ভর রচনার সাথে মিশেছে গুরুবাদ-মুর্শিদী নির্ভরতা। বেদ বেদান্তের দুটো দিক-কর্মভাগ আর জ্ঞানভাগ এর সাথে তুলনীয় শরীয়ত আর মারেফত। অন্তর্মুখী বেদান্ত-সুফীবাদ আমাদেরকে পৌঁছে দিতে চায় ”মহাজন“র কাছে- দেহের মধ্যে থাকা মহাজনের কাছে-কিংবা দেহের বাইরে পরমাত্বার কাছে। পুলসিরাত আর বৈতরণী পার হবার আগে নির্মম সত্য হলো ”আছে এই ভবে সবার মরণ”। মরণ ই যদি হবে তাহলে কেন সেই হিংসা নিন্দা? ”কেন এ হিংসা দ্বেষ, কেন এ ছদ্মবেশ, কেন এ মান অভিমান?“ সরোজ কুমার নাথ