আমাদের চারপাশে যে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, পরিবারও একটা প্রতিষ্ঠান, তাদের থেকে আমরা কখনো কখনো বিরতি চাই। মুক্তিও চাই মাঝেমধ্যে। এই সামাজিক বন্ধন থেকে দূরে দাঁড়িয়ে নিজেদের যাচাই-বিচার করতে চাই। নিজেদের ভালোত্বটুকু, নিজেদের ক্ষুদ্রতাটুকু পরিমাপ করতে চাই। আবু হানিফাও তাই চেয়েছে। আবু হানিফা 'সিদ্ধান্ত' উপন্যাসের কেন্দ্রচরিত্র। উপন্যাসকারের নাম ফৌজিয়া খান তামান্না। দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং স্ত্রী নিয়ে আবু হানিফার সংসার। ধনী পরিবার, শহুরে জীবন, জৌলুশ আর চাকচিক্যে পরিবারের অন্যরা বিভোর থাকলেও আবু হানিফা নির্লিপ্ত থাকে। সে যে কৃষকের সন্তান, সুখে- স্বস্তিতেও ভোলে না সে। গ্রামজীবন তার ভেতরে আলোড়ন তোলে। শহর এবং গ্রাম- এ দুটোর টানাপোড়েনে হানিফার জীবন বিদীর্ণ হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কীসের জয় হবে- শহরের ক্লেদাক্ত নির্মম দেহসর্বস্ব ঐশ্বর্যময় জীবনের, না গ্রামমাটির সোঁদা গন্ধের, পাখির ডাকের, পুকুরের স্বচ্ছজলে ডুবসাঁতারের, গ্রামমানুষের সহজ-সরল ভালোবাসার? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে 'সিদ্ধান্ত' উপন্যাসে। সায়নের নিম্মিকে প্রেগন্যান্ট করে দেওয়ার শাস্তি হবে না? জুঁই কি নিজের শ্বশুরবাড়ির লোকদের শেষ পর্যন্ত আপন করে নেবে? শাশুড়ির কুহক থেকে আবু হানিফা বেরিয়ে আসতে পারবে? রাজনকে বিয়ে করার হঠাৎ প্রস্তাবে হানিফা কন্যা জায়মা কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে? এত বিশাল বৈভব দিয়েই বা শেষ পর্যন্ত আবু হানিফা কী করবে? উপন্যাসটি পড়তে পড়তে এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন পাঠক। উপন্যাসটি উত্তম পুরুষে লিখা। উপন্যাসের ভাষা সংক্ষিপ্ত। কিন্তু প্রতিটি শব্দ অর্থবহ। এই উপন্যাসের সম্পদ এর সংলাপসমূহ। সংলাপ তৈরিতে কোনো কারসাজি নেই। লেখক নিজের কথাগুলোই যেন নিত্যদিনের কথাবার্তার মতো লিখে গেছেন। এর আঞ্চলিক ভাষা মর্মছোঁয়া। চরিত্র নির্মাণে ফৌজিয়া যে দক্ষতা দেখিয়েছেন, তা বর্তমানের অনেক লেখকের মধ্যে অনুপস্থিত। গ্রাম- এক মূর্তিমান নস্টালজিয়া হয়ে এই উপন্যাসে উপস্থিত। আমার মনে হয়েছে- এ যেন হানিফার জীবনের কথনকাব্য নয়, এ যেন আমার ফেলে আসা শৈশবের বিভোর থাকার দিনগুলোর আখ্যান। ফৌজিয়া খান তামান্না কথাসাহিত্যের আঙিনায় পদক্ষেপ ফেলতে শুরু করেছেন মাত্র। 'সিদ্ধান্ত' তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস। দ্বিতীয় উপন্যাসেই জানান দিয়েছেন- বাংলা কথাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার জন্যই তিনি কলম ধরেছেন। হরিশংকর জলদাস কথাসাহিত্যিক
ভাষার মাসে জন্ম নেয়া ফৌজিয়া খান তামান্না। সবুজ প্রকৃতি ঘেরা ভীষনই এঁদো গ্রামে বেড়ে ওঠা ফৌজিয়া খান তামান্না আস্তে আস্তে হয়ে ওঠেন ভাষাশিল্পী।কলেজ এবং পরবর্তী লেখাপড়া,সংসার স্থায়িত্ব ঢাকাতে হলেও পুরোটা স্কুলজীবন মায়ের সাথে কেটেছে সেই এঁদো গ্রামেই। আর তাই চলনে, বলনে, চিন্তাধারায় গ্রাম্য প্রভাব প্রকট। এবং তিনি ভালোবেসে এই প্রভাব বয়ে বেড়াতে চান চিরকালই। স্কুল কলেজে লেখালেখি, সাথে জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় নিয়মিত গল্প ছাপা হলেও দীর্ঘদিন লেখালেখির বাইরে অবস্থান করেছেন। অনলাইন দুনিয়ায় নতুন করে লেখার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ উপন্যাস দিয়ে।লেখকের প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় পাণ্ডুলিপি পুরস্কার জয় দিয়ে।একটি পাঠকপ্রিয় সংকলনে প্রকাশিত গল্পের সুত্র ধরে আত্মপ্রকাশ করেন সেই সিরিজ সংকলনের সম্পাদক হিসাবে। দুই সন্তান আর ডাক্তার স্বামীর সংসারে অবসর কাটে বই পড়ে আর ছবি এঁকে। পরম যত্নে বাগান করা তার প্রিয় শখ। লেখকের প্রকাশিত বই-গহীনে আঁচ (উপন্যাস) বইমেলা ২০২১রহস্যলীনা (থ্রিলার সংকলন) বইমেলা ২০২১।