বঙ্গালী ভইলী উপন্যাসের সিনপসিস বাংলা ভাষার ইতিহাসের প্রাচীনতম যুগ। তখন একমাত্র লেখ্যভাষা সংস্কৃত; পঠন অন্ত্যজশ্রেণির ঘোর নিষিদ্ধ। নিম্নবর্ণের একদল লোক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে প্রাকৃত ভাষার প্রথম লেখ্যরূপ দান করেন; ধর্মের বাতাবরণে চর্যাপদ। তাদের প্রতিপক্ষ আর্যব্রাহ্মণ। দহনকালের সেই ঊষালগ্নে যাপিত জীবনের কিছু নরনারীকে আবর্ত করে এই কাহিনি। ক্ষেত্রকরপুত্র হালিক ধীবরপুত্র জালিককে বলে- আমার আর বিদ্দাজ্জন হলো না রে। চুরি করে পড়া শিখতে গিয়ে সামন্তপ্রভুর হাতে হালিক নিহত; জালিক নিরুদ্দেশ; একদা হয়ে ওঠেন রাজপুত্র সামন্তশুভ। উরুবিল্বে বোধিসত্ত্ব লাভ করতে গিয়ে দেখা হয় ধেনুর সঙ্গে; সুন্দরী ব্রাহ্মণকন্যা; বৌদ্ধতান্ত্রিক দলের সাথে ঘুরে বেড়ান এদেশ-সেদেশ; কালক্রমে হয়ে ওঠেন চাটিলা কুক্কুরীপা, সাথে এক কুক্কুরী; পূর্বজন্মে মানবী ছিলো। সামন্তশুভ আসেন সিদ্ধাচার্য শবরপার চর্যাগৃহে। দীক্ষা গ্রহণ শেষে বারো বছর গঙ্গাধারের নির্জনে কাটিয়ে দেন, নাম হয় লুই বা মৎস্যান্ত্রাদ। তাঁর মাথার উপর রক্ষাকবজের মতো উড্ডীন এক অচিনপাখি। তান্ত্রিকশক্তি দেখে লুইয়ের শিষ্য শালীপুত্রের রাজা ইন্দ্রপাল দীক্ষা নিয়ে সিদ্ধাচার্য দারিকপা হলেন আর কুক্কুরীপার শিষ্য ওড্ডিনের রাজা ইন্দ্রভূতি হলেন তান্ত্রিক সাধক। শতবর্ষী সবজান্তা গঙ্গাধর জম্বুদ্বীপময় ঘুরে বেড়ান আর বলে বেড়ান অজানা কাহিনি। প্রাকৃত ভাষার অইসব সৈনিকদের বৌদ্ধ প-িত কমলশীল বলেছেন বঙ্গালী এবং ভাষাপিতা। কিন্তু কেন? যে কোনো উপন্যাসই উপন্যাসের নতুন সজ্ঞা হতে পারে। মোখলেস মুকুলের ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস ‘বঙ্গালী ভইলী’ গদ্য ও পদ্যের মিশ্রিত কথন-ভঙ্গিকে বিশেষ কোনো সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। সংলাপ, বর্ণনা সবকিছুতেই নতুনত্ব ও নান্দনিকতা লক্ষণীয়। চর্যাপদে খুঁজে পাওয়া সেকালের জনজীবন, বিচিত্র নারী-পুরুষের প্রবল প্রতাপ, বহু মানুষের নানা কর্মযজ্ঞ, পশু পাখি ও মানুষের কথোপকথন উদ্ধৃত হয়েছে অনবদ্যভাবে। এমনকি তাদের আন্তরিক চাওয়া-পাওয়া, কামনাসহ লৌাকিক জীবনের ঘাত প্রতিঘাত সবকিছুতেই নতুন আবহ, একইসঙ্গে জাদুবিদ্যার প্রভাব, পাঠক উপলব্দি করতে পারবেন অনায়াসেই। -মাকিদ হায়দার
মোখলেস মুকুলের জন্মস্থান পাবনা। পিতা: আব্দুল হামিদ, মাতা: ফজিলাতুন্নেছা। জন্মসাল ১৯৬৬। চিকিৎস্যা বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা থেকে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় লেখালেখি শুরু। বইমেলা ‘১৫-তে প্রথম ছোটোগল্পের বই ‘চাকা’, বইমেলা ‘১৬-তে কাব্যগ্রন্থ ‘শূন্য’, বইমেলা ‘১৮-তে উপন্যাস ‘মৃন্ময়বৃক্ষ’, বইমেলা ‘১৯-এ ছোটোগল্পের বই ‘কাঁকড়াকাল’ এবং বইমেলা ‘২১-এ উপন্যাস ‘বঙ্গালী ভইলী’ প্রকাশিত হয়। করোনা নিয়ে তৃতীয় উপন্যাস এবং ষষ্ঠ বই ‘অতঃপর করোনা’ প্রকাশের পথে।