কালভেদে মৌসুমি বায়ুর মতো সাহিত্যের জোয়ার আসে। একেক সময় একেক লেখকের হাত ধরে বিপ্লব ঘটে সাহিত্য নামক শিল্পের। নিয়মাবদ্ধ শর্তারোপে লেখক জন্ম দেয় আরেক সোনালি যুগের। এই বইটিতে লেখক জন্ম দিয়েছেন রহস্যময়তার আরেক অধ্যায়। সহজসরল ভাষায় হাতের কাছে থাকা শব্দের সম্ভারে যে সাহিত্য হতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ‘শিশির’ নামক এই বইটি। শব্দ কিংবা বাক্যের পুনরাবৃত্তিতে ভালোলাগাময় ছন্দ পুরোটা জুড়েই। কখনও নানা সম্ভাষণে আখ্যায়িত করা মানবীর স্মৃতিচারণ। কখনও আবার প্রকৃতির সময়োপযোগী বর্ণনায় নিজের সাথে তুলনীয় উপমা ব্যবহার। ‘ফেরারি’ নামক পাঁচটি গল্প তেমনই সংলাপে লেখকের লেখনশৈলীর পরিচয় বহন করে। তাতে বিষাদময়তার আক্ষেপের সাথে যুক্ত হয়েছে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার হাস্যকর বাণী। বৈরী কিছু নিজস্ব চেতনার সংঘর্ষ। যা লেখকের লেখাকে ত্বরান্বিত করে নতুন মাত্রা যোগ করেছে গল্পগুলোতে। ফেরারি বা পলাতক শব্দটি এক্ষেত্রে রূপক অর্থে ব্যবহৃত। কারো স্থানচ্যুতিতে অস্থাবর অধিকারের দাবিতে পালিয়ে বেড়ায় কথকের স্বপ্নগুলো। আপন আমির বিরোধপূর্ণ রোদনে যা হয়ে উঠেছে ভালো থাকার বিশুদ্ধ মন্ত্র। বইটির কেন্দ্রীয় গল্প ‘শিশির’-এর সূত্র ধরেই ফেরারি নামক গল্পগুলোর সৃষ্টি। যেটির প্রেক্ষাপট বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের ক্ষুদ্র পরিসর হলেও তার মাঝে গল্পকারের যোগ্যতার অন্বেষণ পাবেন। বেশ চেনা ছন্দে স্বল্প ব্যাপকতায় এঁকেছেন অনিন্দ্য নকশা। বইটিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে ‘সানু’ নামের আরেকটি গল্প সংযুক্ত করা হয়। কথক ও আলিম উদ্দিন সাহেবের কথোপকথনে সানু নামক মেয়েটির বর্ণনা করা হয়েছে খানিকটাই। কিন্তু সেটুকুতেই সানুর অস্তিত্ব পুরো গল্পটিতে ছড়িয়ে পড়েছে। স্বীয় চিত্তে মহিমান্বিত সেই নারীমূর্তি হয়ে উঠেছে গল্পের মূল আকর্ষণ। বস্তুত পুরো বইটির লেখাতে লেখকের দৃঢ়চিত্তের উত্তম কিছু গল্পের সংমিশ্রণ ঘটেছে। যা পাঠকের অবশ্যই মনঃপূত করবে বলে আশা রাখছি। সেই সাথে এই তরুণ লেখকের কলম যেন সাহিত্যের আরেক স্বর্গ হয়, দ্বিধাহীন চিত্তে তার কামনা করছি।