কবিতা হলো সাহিত্যের প্রাচীনতম অঙ্গ। সচরাচর বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রকাশ কিংবা গভীর অনুভূতিগুলো অস্ফুটই থাকে। মানুষের সেই অব্যক্ত ভাষা কবিতার শব্দে লিখে অমর হয়েছেন- বাল্মীকি, হোমার, শেলী, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, রুদ্রসহ প্রমুখ কবি। তার রেশ ধরে যুগে যুগে গড়ে উঠে কাব্য। নতুন ভাবধারাতে রচিত হয় এক একটি অমর কবিতা। কালের বিবর্তনে পদ্য কবিতার পর আধুনিক যুগে চলছে গদ্য কবিতার ছড়াছড়ি। নানান বৈচিত্র্যতায় কবির মনের ভাব সমাজের সাথে সংগতি রেখে পুরো মানবজাতির অপ্রকাশিত কথাগুলো শব্দে ভরে যায়। জীবনানন্দ দাশের মতে, “কবির পক্ষে সমাজকে বোঝা দরকার, কবিতার অস্থির ভিতর থাকবে ইতিহাসচেতনা ও মর্মে থাকবে পরিচ্ছন্ন কালজ্ঞান।” আধুনিককালে যতগুলো কবিকে কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, প্রত্যেকেরই একটি নিজস্ব ভাবভঙ্গি আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ‘দেলোয়ার সাইদি সাদ্দাম’ একটু ব্যতিক্রম। নাট্যসংলাপের মতোই তিনি লিখে গেছেন ছোট কিংবা বড় কবিতাগুলো। মনে হচ্ছে কবিতার ভিতরেও গল্প আছে, আছে পাওয়া না পাওয়ার আকাক্সক্ষা, আছে গুপ্ত কোনো ঘটনার স্বাদ। তেমনই ঢঙে রচিত- বৈরী চেতনা, আমি কিংবা তুমি, প্রেমিক নাকি ক্লাউন কবিতাগুলো। আবার ‘আমাদের বিচরণক্ষেত্র’, ‘বর্ণবাদ’, ‘বিভেদহীন শ্রম’ কবিতাগুলোতে ফুটে উঠেছে সমাজের নানান অসঙ্গতি। অপরদিকে ‘খোঁপার অন্ধকার’, ‘মৌলিক ভালোবাসা’, ‘তুমি নামক মাদক’, ‘নাকফুল’ কবিতাগুলো কবির রোমান্টিকতার পরিচয় বহন করে। ‘বিচ্ছেদের পর’, ‘ফেরার সুযোগ’, ‘সেপারেশন’, ‘মুক্তমনা’ কবিতাগুলো প্রত্যেক ভাঙা হৃদয়ের প্রলেপ হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। বস্তুত এ বইটির প্রত্যেকটি কবিতাই কবির লেখনীর পোক্ততা কিংবা শব্দের নিপুন গাঁথনির নিদর্শন পাঠক পাবেন। হয়তো প্রতিটি অবসরে হতে পারে তা নির্মল আনন্দের উৎস। আশা করছি বইটি পাঠক সমাজে সমাদৃত হবে।