পশ্চিম বাংলার গুটিকয়েক স্থান দুটি দিনের জন্য পাখির চোখে দেখাকে ‘ভারতভ্রমণ' বলা চলে না। আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত ভারত । একই সময়, বৃষ্টি, খরা, বরফ । আবার কোথাও ধু-ধু মরুর কর্কশ সম্ভাষণ । সেই ভারত ভ্রমণ সহজ ব্যাপার নয় । আমার প্রিয় বাংলার অংশও আজ ভারত । পশ্চিম বংলার কিছু অংশ ঘুরে এসে আমি যদি বলি, ভারত ভ্রমণ করেছি, তা হলে বিচিত্র ভাষা-সংস্কৃতি আর ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের ভূ-ভারতকে ছোটো করা হয়। অবশ্য আমি অনন্যোপায়। পশ্চিম বাংলা আজ ভারত। কেন যেন মনে আসছিল শিশুকণ্ঠে গাওয়া একটি গান : 'তেলের শিশি ভাঙল বলে তোমরা আমায় রাগ করো/ তোমরা যে সব বুড়ো খোকা ভারত ভেঙে ভাগ করো' । ৬ নভেম্বর, ২০১৮ বেলা ১২টার দিকে বিমান থেকে কলকাতার মাটিতে পা রাখি। দমদমের প্রসারিত প্রাঙ্গণ থেকে এক পশলা হাওয়া এসে লাগে । হেমন্তের শিহরন-জাগানো হাওয়ায় রক্তে শিহরন তুলে গেল । ইতিহাসের কত ভাঙাচোরা স্মৃতি তার সাথে! সেই সুতানটি থেকে কলকাতা— ভারতগ্রাসী ফিরিঙ্গি বণিকের বাংলার কোমল মাটিতে প্রথম কঠিন পায়ের ছাপ । বণিকের তুলাদণ্ডকে রাজদণ্ডে পরিণত করার সাধনা । ক্লাইভ-মিরজাফর-মিরন— আরও এক ঝাঁক খল ষড়যন্ত্রীর কুৎসিত মুখ— সেই সাথে হতভাগ্য সিরাজ। পাশাপাশি এক ঝাঁক উজ্জ্বল সূর্যের উদয় । বিদ্যাসাগর, রামমোহন, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, নজরুল, দিনেশ-বিনয়-বাদল-সূর্যসেন-ক্ষুদিরাম— আরও কত নাম । কলকাতার পথে গাড়িতে ছুটলে আমার অগ্নিযুগের ভয়জয়ী বিপ্লবী উল্লাসকরকে বেশি মনে পড়ে । বিচারে ফাঁসির আদেশ পেয়ে যিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েই উল্লাস ভরে গেয়ে উঠেছিলেন : ‘সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এ দেশে সার্থক জনম, মাগো, তোমায় ভালোবেসে ।’