২০২০সাল থেকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দ "লকডাউন"। প্রথম প্রথম মনে হয়েছিল পৃথিবী থমকে গেছে। থেমে গেছে জীবন। লকডাউনে গৃহবন্দি মানুষ। কিন্তু জীবন তো আসলে থেমে নেই। বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে ছুটতেই হচ্ছে। ঘরেই বসেই চলছে অফিস। দেড় বছর চলে যাচ্ছে বাচ্চারা স্কুল করছে বাসায় থেকে। সংসার, বিয়ে, প্রেম, সন্তানের জন্ম, মৃত্যু সবকিছুই চলছে সময়ের নিয়মে। তবে অনেকটা বদলে যাওয়া নিয়মে। নতুন এক পৃথিবী এখন আমাদের। যেখানে আষ্টেপিষ্ঠে আছে মাষ্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হোম কোয়ারেন্টাইন, অফিস ফ্রম হোম, হোম স্কুল, অতিমারি, লকডাউন। এই যে বদলে যাওয়া নতুন পৃথিবী আমাদের , সেই নতুন পৃথিবীর পনেরোটি গল্প নিয়ে এই "লকডাউন"।
এক) লকডাউনে আহ্ নাফ -- একজন তেরো বছরে পা রাখা কিশোর ছেলে আটকে গেল ঘরে লকডাউনে। যে ছিল প্রচন্ড স্কুল পাগল। রোজ বিকেলে যে মাঠে খেলতে যেত ফুটবল, ক্রিকেট। সে এখনো চব্বিশ ঘন্টা চার দেয়ালে বন্দি। শারীরিক মানসিক পরিবর্তের এই ভীষন ক্রান্তিকালে বিশ্ব জুড়ে কোভিড ‐১৯ কি পরিবর্তন ঘটানো কিশোর আহ্ নাফের জীবনে।
দুই) ডক্টরস লাইফ ইন প্যানডেমিক--- ডাক্তারদের জীবন কেমন কাটছে এই কোভিডে? তাদের জীবনে কি আদৌ এসেছে লকডাউন ? তারা কিভাবে পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা করছেন ? জানতে ইচ্ছে করে না ?
তিন) আড়াই তলার ছাদঘর--- লকডাউনে একজন চিকিৎসকের রহস্যময় লাস উদ্ধার হয় কর্মস্থলে তার বাসা থেকে। কেন ? কিভাবে ?
চার) অফিস ফ্রম হোম --- কর্মজীবী নারী প্রিয়াঙ্কাকে লকডাউনে ঘরে বসে সংসার, অফিস, বাচ্চা সব সামলাতে হচ্ছে। অথচ ঘরের অন্য লোকেরা হয়তো শুধু অফিস, স্কুল কলেজ করছে। আর মজাদার খাবারের আবদার ধরছে। কাজের মানুষের ছুটি। ফলে সব মিলিয়ে না অফিস না বাসা, কোনটাই ঠিকমতো হচ্ছে না। অথচ ঘরের কেউ যেন তা দেখেও দেখছে না। অভিমানী হয়ে ওঠে সে।
পাঁচ) পাপ ---- এই যে অতিমারির তাতেও কি থেমে আছে পাপ করা ? এই যে মানুষগুলো এরা কি ভয় করে না ? লকডাউনে বন্ধ নেই পাপাচার।
ছয়) উঁকুন ---- লকডাউনে সন্তানহীন দুজন নর নারী নতুন করে আবিষ্কার করে এই এত বড় পৃথিবীতে তারা দুজনে দুজনের সবচেয়ে আপন। আর কেউ নেই মহামারীতে তাদের জীবনে।
সাত) রক্তের দায়---- রক্ত কিছু কিছু সময় শোধ নেয়। যে শোধের কোন হিসেব হয় না। জিনতত্ব থমকে দাঁড়ায়।তুবা রক্তের দায় মিটিয়ে দিতে বদ্ধ পরিপক্ব। কিন্তু কেন ?
আট) যে গল্পের নাম নেই---- জীবনের সত্য গল্পের কোন নাম আসলে থাকে না। কারন তা জীবন থেকে নেয়া ।
নয়) পৃথিবী বিষমুক্ত হলে --- পৃথিবী বিষমুক্ত হলে দেখা হবে সুদীপের সাথে দেখা করবে মণিদীপা। কথা দেয়। কিন্তু .........
দশ) পাহাড়ের নাম হৈমন্তী ---- এই কোভিডে বহু অনলাইন কোর্সে এনরোল করেছেন অনেকে। তৈরি হয়েছে নতুন করে বন্ধুত্ব। ভেঙেছে পুরাতন কত সম্পর্ক। সেসব টানাপোড়েন নিয়ে পাহাড়ের নাম হৈমন্তী।
এগারো) বিয়ে--- লকডাউনে বহু অদ্ভুত ধরনের হুটহাট বিয়ে ঘটেছে সমাজে। জীবনের অন্যতম এই উৎসব যাদের জীবনে এল , সেই নর নারীরা কিভাবে তা গ্রহণ করলো ? বারো) টাকিলা গ্লাস--- দুষ্টু মিষ্ট প্রেম লকডাউনে।
তেরো) সুইসাইড নোট --- মেডিকেল শিক্ষার্থী পর্শিয়া ফাঁদে পড়ে গেছে মেডিকেল শিক্ষা অব্যবস্থাপনার। সাপ্লি চলছে। এর মাঝে লকডাউন। পিছিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।এ থেকে কে মুক্ত করবে ওকে?
চৌদ্দ) খারাপ মেয়ে--- লকডাউনেও থেমে নেই সমাজের জাজমেন্টাল আচরনের। তাই তো এখনো চলে কে খারাপ মেয়ে তার নির্ধারন।
পনেরো) সমুদ্র স্নানে চল--- লকডাউনে হুট করে দেখা মেলে প্রাক্তনের সাথে। পাশে দাঁড়িয়ে বর্তমান। প্রকৃতির কি নির্মম পরিহাস ।
জন্ম ... ২৩ জুন। ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলির পৈতৃক বসতভিটাতে বর্ষাসড়বাত ভোরে। পিতা- মো. আতিয়ার রহমান। ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবক। মাতা- নূরুন নাহার রহমান। গৃহিণী। পাঁচ বোন। লেখিকা তার পিতা-মাতার বড় সন্তান। একমাত্র সন্তান আহ্নাফকে নিয়ে তার একান্ত নিজস্ব ছোট্ট সংসারজীবন। লেখিকা পেশায় একজন চিকিৎসক। স্কুল-কলেজজীবন ফরিদপুরে কাটিয়েছেন। পরবর্তীকালে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে চলে আসেন ময়মনসিংহ। কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস কোর্স শেষ করে বারডেম থেকে সিসিডি এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএইচ ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত। লেখালেখির শুরু স্কুলজীবন থেকেই। স্কুল, কলেজের ম্যাগাজিন, দেয়াল পত্রিকা এবং বিভিনড়ব দৈনিক পত্রিকার শিশু, সাহিত্য এবং নারী পাতায় লিখতেন। মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর লেখালেখিতে একটা বড় গ্যাপ তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিনড়ব অনলাইন পোর্টাল এবং ফেসবুকের বিভিনড়ব লেখালেখির গ্রুপে আবার নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। ২০১৮-এ অমর একুশে বইমেলাতে লেখিকার প্র ম একক বই ‘আনটোল্ড স্টোরি ফ্রম এ স্ট্রাগলার’ প্রকাশিত হয় শব্দভূমি প্রকাশনী থেকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯-এ আসে গল্প সম্ভার ‘অপ্রত্যাশিত তুমি আমি’ বইটি। এছাড়া আরো বেশকিছু যৌথ বইতেও লেখিকার লেখা গল্প প্রকাশিত হয়েছে। লেখিকা মূলত সমাজের বিভিনড়ব অসামঞ্জস্য এবং যুগ যুগ ধরে চলে আসা গৎবাঁধা তবে অযৌক্তিক ইস্যুগুলো তুলে আনেন লেখার ভেতর দিয়ে। তার লেখার উল্লেখযোগ্য দুটো বিষয় হচ্ছে পজিটিভ ভাইব এবং সাহসিকতা। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ না করে লেখার চরিত্রগুলোকে মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টাও লক্ষণীয় তার লেখাতে। পেশায় চিকিৎসক হওয়ায় সমাজের বিভিনড়ব শ্রেণির মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখার, জানার সুযোগ পান লেখিকা। যা তার লেখালেখির ভাণ্ডারকে দিনে দিনে আরো সম"দ্ধশালী করে তুলবে বলে আশাবাদী।