১৯৭১-২০২১, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে তার পটভূমি শুরু আরো পেছন থেকে। হাজার বছর আগে থেকেই বাঙালির বিদ্রোহ ও মুক্তিসংগ্রাম চলে আসছিল। এর চূড়ান্ত সফলতা লুকিয়েছিল ১৯৭১-এ। একজন বংশীবাদকের আগমন ছিল অপেক্ষিত। ১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে অপেক্ষিত কাজ সমাপ্ত করলেন। তার বজ্র নির্ঘোষে একটি জাতি একটি পতাকার জন্য। জেগে উঠল। দুনিয়ার দুর্ধর্ষ ও জালেম বাহিনী বলে পরিচিত পাকিস্তানি সৈন্যদের পরাজিত করে বাঙালি সেদিন তার ভূখণ্ডকে বিশ্বে পরিচিত করে তুলেছিল। সে পথচলা এখনো চলছে। মুক্তিসংগ্রাম কখনো থেমে থাকে না। রাজনৈতিক সংগ্রামের পর। অর্থনীতির সংগ্রাম আরো কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ সে পথেও বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে । স্মারকগ্রন্থটি সে সাক্ষ্যকে বহন করে পরিকল্পিত হয়েছে। কীভাবে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম শুরু হয়েছিল, বছরের-পর-বছর কত বিদ্রোহ ও আত্মদান ঘটেছে এর পেছনে— গ্রন্থটি তারই দালিলিক বিবরণ সমৃদ্ধ একটি আকর গ্রন্থ। মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ করে শুরু হয়নি, তার প্রতিটি ধাপকেই এখানে তুলে আনা হয়েছে। আবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বমুহূর্ত এবং পরবর্তী কর্মকাণ্ডগুলোও এখানে যথাযথভাবে পরিবেশিত হয়েছে এবং স্বাধীনতার পর একটি জাতিরাষ্ট্র কীভাবে দাঁড়িয়েছিল তার চিত্রটিও এ গ্রন্থে বিদ্যমান। এর ফলে নতুন প্রজন্ম দেশের জন্ম-ইতিহাসের এবং তার পরবর্তী ধাপগুলো সম্পর্কে একটি পূর্ণ চিত্র পাবে। একটি গ্রন্থের মধ্যেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস পূর্ণাঙ্গভাবে প্রাপ্তির বিরল সুযোগ রয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ পাঠকের কাছে হবে এক দুর্লভ সংগ্রহ।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামে এক রাজনৈতিক পরিবারে। পিতা হাজী ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলা কংগ্রেস কমিটি ও খেলাফত কমিটির সভাপতি ছিলেন। অসহযােগ আন্দোলনে তিনি কারাবরণ করেন । গাফফার চৌধুরী যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র, তখন কবিতা লেখা শুরু করেন। ষষ্ট শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক নবযুগের ছােটদের পাতায় তার লেখা প্রথম ছাপা হয়। তারপর স্কুলের ছাত্র থাকা কালেই তার লেখা কলকাতার। সওগাত, ঢাকার সােনার বাংলা (অধুনালুপ্ত) পত্রিকায় ছাপা । শুরু হয় । এসএসসি পাশের পর তিনি ঢাকায় আসেন এবং সওগাত, মােহাম্মদী, মাহে লও, দিলরুবা প্রভৃতি মাসিক পত্রিকায় তার গল্প উপন্যাস ছাপা হতে থাকে। বাজারে তার বেশ কয়েকটি গল্প ও উপন্যাস, ছােটদের এডভেঞ্চার কাহিনী, প্রবন্ধ সংগ্রহ, স্মৃতিকথা রয়েছে এবং পাঠক সমাজে আদৃত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরষ্কার, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদক এবং একুশের পদক পেয়েছেন এবং বিদেশেও নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি অমর একুশের গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাের’ রচয়িতা। বঙ্গবন্ধু-হত্যার উপর লেখা নাটক ‘পলাশি থেকে ধানমন্ডি’ দারুন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তিনি বহু সাহিত্য মাসিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন । বেতার ও টেলিনাটক লিখেছেন। তবে বর্তমানে তিনি একজন সার্বক্ষণিক কলামিষ্ট । ঢাকায় চারটি জাতীয় দৈনিকে এবং লন্ডন ও নিউইয়র্কে একাধিক সাপ্তাহিক পত্রিকায় তার রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা কলাম নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তার কলাম দেশে-বিদেশে বাংলাভাষাভাষী পাঠকের কাছে দারুন জনপ্রিয়। গাফফার চৌধুরী এখন লন্ডনে বাস করেন। তিনি এক ছেলে চার মেয়ের পিতা। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণের কাজে তিনি এখন ব্যস্ত।