কাজী নজরুল ইসলাম লিখিত শিশু-কিশোরদের জন্য ছড়া, কবিতার এই সংকলন বাংলাভাষী ছোটরা এবং কিশোর-কিশোরীরা পড়তে পারবে। তারা তাদের প্রিয় কবিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে যে ছোটদের তিনি কত ভালোবাসতেন। নজরুল ছোটদের জন্য যে কটা কবিতা-ছড়া লিখেছেন— যেমন: প্রভাতী, খুকি ও কাঠ্্বেরালি, দেখব এবার জগৎটাকে, ঝিঙেফুল-এর মতো মিষ্টি কবিতাগুলো ছোটদের মনে সুন্দরভাবে ছাপ ফেলে। ছোটদের কবিতা আবৃত্তি শেখানো আর ছন্দের গান তৈরি করতে এমন কবিতা বাংলা শিশুসাহিত্যে খুব বেশি নেই। বহু যুগ ধরে পাঠ্যবইয়ে নজরুলের লেখা ‘প্রভাতী’ কবিতা ছোটদের হৃদয়ে আলাদা একটা ভালো লাগার, ভালোবাসার স্থান করে নিয়েছে। মানুষের জীবনে প্রতিদিনই প্রভাত আসে, ভোর হয়, সুন্দর একটি সকাল দিয়ে প্রতিদিনের কাজ হয় শুরু। নজরুল তার ‘প্রভাতী’ কবিতা দিয়ে সব শিশুর চোখের ঘুমকে যেন এক চিরচেনা নতুন সাজে এনে মেলে ধরেছেন। আগেকার দিনে যুগে যুগে ছোটরা কবিতাপাঠ শিখত ‘পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল’ দিয়ে, এখন সে জায়গা নিয়েছে নজরুলের লেখা ‘ভোর হল দোর খোল’ কবিতা। ছোটদের খেলার রাজ্যে তাদের মন জয় করার এমন কবিতা আমাদের শিশুসাহিত্যে আজকাল আর লেখা হয় না বললেই চলে। এই সংকলনটিতে একই সঙ্গে নজরুলের তারুণ্যের দ্রোহ, সাম্য, মানবতা, ন্যায়বোধ ও শিশু-কিশোর মনের বিচিত্র কল্পনাপ্রতিভার স্বাক্ষর রয়েছে।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী, সুরকার ও প্রবন্ধকার। নজরুলের বাল্যকাল কেটেছে দুঃখ-দুর্দশায়। তাই তাঁর ডাকনাম ছিলো দুখু মিয়া। তাঁর বৈচিত্র্যময় শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের মক্তবে। পিতৃহীন হওয়ার পর তিনি পড়ালেখা ছেড়ে যোগ দেন লেটোর দলে, যেখান থেকে তিনি কবিতা ও গান রচনার কৌশল রপ্ত করেন। পরবর্তীতে এক বছর ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে পড়ে পুনরায় চুরুলিয়ায় রানীগঞ্জের শিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন, এবং সেখানে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। প্রবেশিকা পরীক্ষার আগেই তাকে পড়ালেখা ছাড়তে হয় যুদ্ধে যোগদানের জন্য। যুদ্ধের দিনগুলোতে নানা জায়গায় অবস্থান করলেও তার করাচির সৈনিকজীবনই উল্লেখযোগ্য, কেননা সেসময়েই তার প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ নামক গল্প প্রকাশের মাধ্যমে। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমূহ’র বিষয়বস্তু বিবিধ। তবে কাজী নজরুল ইসলাম এর বই-এ সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক যন্ত্রণা এবং সাম্যবাদের ধারণা প্রকটভাবে স্থান করে নিয়েছে। রাবীন্দ্রিক যুগে তার সাহিত্য প্রতিভা উন্মোচিত হলেও তার সৃষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমগ্র এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘রিক্তের বেদন’, ‘দোলনচাঁপা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, ‘প্রলয়শিখা’ ইত্যাদি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নজরুল ‘সাপ্তাহিক লাঙল’, দ্বিসাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’র সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।