পদ্মা-মেঘনা-যমুনা বিধৌত হাজার বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ এ বাংলাদেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে পৃথিবীর ভূ-খন্ডে একটি স্বাধীন, সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর যে গল্প তৈরি হয়েছে বিশ্ব মানচিত্রে এর রচিয়তা সাত কোটি বাঙালির অপ্রতিরোধ্য দামাল ছেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ব্যক্তিগত সুখ-সমৃদ্ধি, লোভ-লালসা, শখ, বিনোদন সবকিছু বিসর্জন দিয়ে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে যিনি বাঙালিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সৎসাহস শিখিয়েছেন, তিনি আর কেউ নয় কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন ও জনতার প্রিয় মুজিব ভাই। ছোটবেলা থেকেই জুলুম, শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিপ্লবী এক সৈনিক হিসেবে বেড়ে ওঠা খোকা মিয়া ধাপে ধাপে বাঙালি জাতির মহানায়কে পরিণত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনালি শৈশব, তারুণ্যভরা কৈশোর, উদ্দীপ্ত যৌবন, জীবনের বিচিত্রময় সময়গুলো রাজপথের মিছিল কিংবা জেলখানার অন্ধ প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছিলেন শুধু মজলুম জনতার মুক্তির সনদ তৈরি করার স্বপ্নে। ভাষা আন্দোলনের দিনগুলোয় হানাদার গোষ্ঠী কর্তৃক ঘোষিত মায়ের ভাষা বিলুপ্ত করার ন্যক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা ছাত্র-জনতার অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির স্বাধীনতার বীজ বপন করেন ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপনের মধ্য দিয়ে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ঐতিহাসিক প্রেরণা যেমন দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছিল ছাত্র-জনতার মধ্যে, ঠিক তেমনি হানাদার গোষ্ঠীর মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল একজন মুজিবের হুঙ্কার। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর তর্জনী নাড়ানো হুঙ্কারের বজ্রনিনাদ ঘোষণায় কেঁপে উঠেছিল হানাদারের দুর্গ। অবাক বিস্ময়ে বিশ্ববাসী দেখেছিল সিংহের গর্জন। বঙ্গবন্ধুর জীবন বাজি রাখা সংগ্রাম আর আত্মত্যাগে অনুপ্রাণিত হয়ে হানাদারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল বাংলার কোটি দামাল। একজন বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণার মহানায়ক হিসেবে সামনে রেখে নিজের প্রিয় জীবনখানা বিলিয়ে দিয়েছিলেন ৩০ লাখো বঙ্গ দামাল। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব ইতিহাসে সমৃদ্ধ হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। পৃথিবীর বিভিন্ন স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠীর কাছে তিনি একটি জ্বলন্ত দর্শন আর মুক্তি সংগ্রামের অনুপ্রেরণা হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছেন। বর্ণাঢ্য জীবনের বাঁকে বাঁকে অসংখ্য ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ও মর্যাদাশালী দেশ হিসেবে বিনির্মাণের জন্য। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতি নড়বড়ে চেইন অব কমান্ড আর খালি হাত নিয়ে স্বপ্ন দেখান বাঙালিকে ঘুরে দাঁড়ানোর। প্রশাসনের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তিনি ভাতৃত্বের নজির স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করেন। উঁচু-নীচু, ভেদাভেদের দেয়াল বিচ‚র্ণ করে একটি মানবিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। তার শিক্ষানীতি, পররাষ্ট্রনীতি স্বাস্থ্যনীতিসহ প্রতিটি নীতিই ছিল সদ্য ভ‚মিষ্ঠ হওয়া একটি নতুন রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রকাঠামোয় রূপ দেয়ার সংগ্রাম। জাতির পিতার ছন্দময় শৈশব, রঙিন কৈশোর, বর্ণিল যৌবন আর বিপ্লবী ওই সময়গুলো একই ফ্রেমে আবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছি ‘বিশ্বনন্দিত এক নক্ষত্র শেখ মুজিবুর রহমান’ গ্রন্থে। তবে একটি মাত্র গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর মতো একটি বিশাল প্রতিষ্ঠানকে চিত্রায়িত করা সম্ভব নয়। তবুও এ গ্রন্থটির মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে। আশা করি, সবাই মনোযোগ দিয়ে বইটি পাঠ করলে নিজেকে একজন মুজিব আদর্শের সৈনিক হিসেবে গড়ে তোলা সহায়ক হবে।