লোকাচার হলো মানুষের আজন্মলব্ধ প্রত্যয় ও বিশ্বাসের অঙ্গ । বিশ্বাস ও কর্মের সাথে দৈবশক্তির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তবে এইসব লোকাচার প্রতিপালনের ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর অংশগ্রহণই থাকে বেশি। কোনো কোনো সময় পুরুষ ও নারী সমানভাবে অংশগ্রহণ করে। আবার এমন লোকাচারও আছে যেখানে পুরুষের অংশগ্রহণ দূরের কথা তাদের উপস্থিতিও থাকে নিষিদ্ধ। নানা আশঙ্কা, ভয়-ভীতি, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি, অমঙ্গল ও কল্যাণবোধ ইত্যাদি অভিব্যক্তির মধ্যে আবর্তিত হয় মানুষের জীবন। এর সঙ্গে রয়েছে দৈবশক্তির সহাবস্থান। মানুষের দৈববিশ্বাস ও বৈষয়িক মঙ্গলচিন্তা থেকেই লোকায়ত সমাজে নানাবিধ আচার ও ক্রিয়ানুষ্ঠানের সৃষ্টি হয়েছে। শাস্ত্রীয় আচারে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উভয় প্রকার কামনা প্রকাশিত হয়। কিন্তু লোকাচারে কেবল পার্থিব কামনা-বাসনা প্রতিফলিত হয়। লোকাচারসমূহ একদিকে অঞ্চলকেন্দ্রিক, অপরদিকে আবার অঞ্চলনিরপেক্ষ । লোকাচার কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা কালের চিন্তা-চেতনাকে বাহিত করে না বরং তা যুগ থেকে যুগান্তরে, কাল থেকে কালান্তরে প্রচলিত সমাজ-মানসের সমন্বিত চিন্তার ফসল। এরমধ্যে প্রতিফলিত হয় জাতির অতীত ইতিহাসের নানা উপকরণ, কৌমচেতনা এবং বহু বিচিত্র সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও নৃ-তাত্ত্বিক উপাদান । লোকাচার প্রধানত দুই প্রকার- (১) শাস্ত্রীয় বা ধর্মীয় সংস্কারকেন্দ্রিক লোকাচার (২) লৌকিক লোকাচার ৷ শাস্ত্রীয় লোকাচারে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উভয় প্রকার কামনাই প্রকাশিত হয়। কিন্তু লৌকিক আচারে কেবল পার্থিব প্রত্যাশা এবং বাসনা প্রতিফলিত হয়। প্রত্যাহিক জীবনের রোগ-ব্যাধি, আপদ-বিপদ, অকল্যাণ, জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ, ফসল বৃদ্ধি, দারিদ্র্য, বৃষ্টি ও খরা, অশুভ শক্তির আগ্রাসন, শান্তি ও স্বস্তি ইত্যাদি ঘটনায় লোকাচারের সৃষ্টি ও প্রসার। বাংলাদেশের লোকাচার কারো সামান্য উপকারে আসলেও আমাকে সার্থক মনে করবো। গ্রন্থটি লেখার কাজে যারা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন কিংবা যেসব গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার সহযোগিতা নিয়েছি সবান কাছে কৃতজ্ঞ। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ হুমায়ূন রহমান
হুমায়ুন রহমান ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার পাটিতাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাতা- মনোয়ারা বেগম, পিতা- আব্দুর রহমান। নয় ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। লোকসাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করছেন। সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও তার বিচরণ রয়েছে। নিজ গ্রামের পাঠশালায় পড়াশুনা শুরু করেন। বানিয়াকাঠি হেমন্ত পন্ডিতের পাঠশালা থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর দীর্ঘা উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পড়াশুনা শুরু করলেও এসএসসি পাস করেন স্বরুপকাঠি উপজেলার বলদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। কলেজ জীবন কেটেছে স্বরূপকাঠি কলেজে। এরপর জগন্নাথ কলেজ, সিটি ল কলেজ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বশেষ আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএড করেন।