চাঁদের পাহাড় একটি বাংলা রোমাঞ্চকর উপন্যাস। ১৯৩৭ সালে গ্রন্থাকারে বের হওয়া এই উপন্যাসটি শঙ্কর নামক ভারতবর্ষের সাধারণ এক তরুণের আফ্রিকা মহাদেশ জয় করার কাহিনী। বাংলা ভাষায় এটিই সর্বাধিক জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ রোমাঞ্চকর উপন্যাস। সারসংক্ষেপঃ বাঙালি ছেলে শঙ্কর, পাকা খেলোয়াড়, নামজাদা বক্সার, ওস্তাদ সাঁতারু এফএ পাস করে সুবোধ ছেলের মতো কাজকর্মের সন্ধান করল না, দেশান্তরের হাতছানি পেয়ে সে পাড়ি দিল সুদৃঢ় পূর্ব আফ্রিকায়। উগান্ডা রেলওয়ের নতুন লাইন তৈরি হচ্ছিল, চাকরি পেয়ে গেল। ডিয়েগো আলভারেজনামে দুর্ধর্ষ এক পর্তুগিজ ভাগ্যান্বেষীর সঙ্গে হঠাৎ করে তার দেখা হয়। শঙ্কর এই দুঃসাহসী ভাগ্যান্বেষীর সঙ্গ ধরে মহাদুর্গম রিকটারসভেল্ড অজ্ঞাত এক হীরার সন্ধানে চলে গেল। ডিঙ্গোনেক বা বুনিপ নামে অতিকায় এবং অতিক্রূর এক দানব-জন্তু সে হীরা আগলে থাকত। পর্যটকেরা যার নাম দিয়েছেন চাঁদের পাহাড়, সেই রিকটারসভেল্ড পর্বতে গিয়ে জীবনমৃত্যু নিয়ে শঙ্করকে যে রোমাঞ্চকর ছিনিমিনি খেলতে হলো তার আশ্চর্য বিবরণ যেকোনো বয়সের কল্পনাকে উত্তেজিত করবে। বিখ্যাত ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতা অনুসরণে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগলিক সংস্থার এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যাদির যথাযথ বর্ণনা দিয়েছেন লেখক এবং গল্পের পাশাপাশি হুবহু আফ্রিকান পরিবেশের যেসব নিপুণ ছবি আঁকা হয়েছে তা বাংলা বইয়ের জগতে আদর্শস্থানীয়। বিভূতিভূষণের হাতে তরুণদের জন্য লেখা এ বই ক্লাসিক হিসেবে পরিগণিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু কালজয়ী উপন্যাস রচনার মাধ্যমে জয় করে নিয়েছেন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের হৃদয়। শুধু উপন্যাসই নয়, এর পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন বিভিন্ন ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, দিনলিপি ইত্যাদি। প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল যশোর জেলায়। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর প্রথম বিভাগে এনট্রান্স ও আইএ পাশ করার মাধ্যমে। এমনকি তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করেন। সাহিত্য রচনার পাশাপশি তিনি শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমূহ এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো 'পথের পাঁচালী', যা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হওয়ার মাধ্যমে। এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় অর্জন করেছেন অশেষ সম্মাননা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই এর মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো 'আরণ্যক', 'অপরাজিত', 'ইছামতি', 'আদর্শ হিন্দু হোটেল', 'দেবযান' ইত্যাদি উপন্যাস, এবং 'মৌরীফুল', 'কিন্নর দল', 'মেঘমল্লার' ইত্যাদি গল্পসংকলন। ১০ খণ্ডে সমাপ্ত ‘বিভূতি রচনাবলী’ হলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমগ্র, যেখানে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে তার যাবতীয় রচনাবলী। খ্যাতিমান এই সাহিত্যিক ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর বিহারের ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর 'রবীন্দ্র পুরস্কারে' ভূষিত হন।