অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী ডিরেক্টর খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) ১৮৭৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থান সাতক্ষীরা জেলার নলতা শরীফ। ১৮৯৫ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি বাঙালি হিন্দু-মুছলমানের মধ্যে প্রথম ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিস-এ অন্তর্ভুক্ত হন। এই উপমহাদেশের বাঙালি মুছলিম সমাজের চৈতন্য ও সম্বিৎ ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি আজীবন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন । শিক্ষা সংস্কার তথা মুছলিম শিক্ষার সংস্কার সাধন করে তিনি তৎকালীন মুছলমানদের শিক্ষার পথ সুগম করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবিস্মরণীয় অবদান ও পরীক্ষায় উত্তরপত্রে ক্রমিক নং লেখার পদ্ধতি প্রবর্তনসহ বহুবিধ অবদানের জন্য তিনি শতাব্দির পর শতাব্দি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পরিচর্যা ও উন্নয়নে তাঁর শ্রম, মননশীলতা, অধ্যয়ন ও প্রজ্ঞার পরিচয় মেলে। তিনি বঙ্গীয় মুছলমান সাহিত্য সমিতির ১৯১৭- ১৯১৮ সালের কার্যকরী পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন । তিনি শতাধিক গ্রন্থের প্রণেতা। বাংলা সাহিত্যে বহুমুখী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমী তাঁকে ১৯৬০ সালে ‘ফেলো’ মনোনীত করেন। ১৯১১ সালে তিনি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির সদস্য মনোনীত হন । তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। তিনি এদেশের অনন্য সাধারণ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘আহ্ছানিয়া মিশন'-এর প্রতিষ্ঠাতা। সমাজ সেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৬ সালে তিনি ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ পুরস্কার (মরণোত্তর)'-এ ভূষিত হন। চাকুরি জীবনে সৎ ও প্রশংসনীয় কাজের জন্য তিনি ১৯১১ সালে ‘খানবাহাদুর' খেতাব লাভ করেন। তিনি একজন ছুফীবাদী জীবনঘনিষ্ঠ ও উদার দার্শনিক এবং মাদারজাত অলী ছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি প্রয়াত হন ।
Khan Bahadur Ahsanullah সাতক্ষীরা জেলার (তদানীন্তন খুলনা জেলা) নলতা শরীফে ১৮৭৩ সালে ডিসেম্বর মাসের কোন এক শনিবার প্রত্যুষে হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা(রঃ) জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের বহু পূর্ব হতে এ মহান সাধকের আগমন বার্তা পৌঁছেছিল। তাঁর পিতা মুনশী মোঃ মফিজ উদ্দীন একজন ধার্মিক, ঐশ্বর্যবান ও দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর পিতামহ মোঃ দানেশও একজন ধর্মপ্রাণ ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। তার পিতার নাম মুন্সী মোহাম্মদ মুফিজ উদ্দীন এবং মায়ের নাম মোছাঃ আমিনা বেগম। হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রঃ) ছিলেন পিতামহের একমাত্র পুত্রের জ্যেষ্ঠ সন্তান। ফলে তাঁর শিক্ষার জন্য পিতা ও পিতামহের আপ্রাণ চেষ্টা ও আগ্রহ ছিল। তাঁর বয়স পাঁচ বৎসর পূর্ণ না হতেই প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। ১৮৮১ সালে তিনি 'গ-মিতিয়' (বর্তমান দ্বিতীয় শ্রেণীর সমমান) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একটি রূপার মুদ্রা পুরষ্কার পান। তিনি নলতার মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয় হতে ৩য়,৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ ভাগ অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি টাকী গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে চতুর্থ (বর্তমান সপ্তম) শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৮৮৮ সালের শেষভাগে কলকাতায় লন্ডন মিশন সোসাইটি ইন্সটিটিউশনে সেকেন্ড ক্লাসে (বর্তমানে নবম শ্রেণী) ভর্তি হন এবং এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮৯০ সালে কৃতিত্বের সাথে এন্ট্রান্স (বর্তমানে এস,এস,সি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ও বৃত্তি লাভ করেন। তিনি হুগলী কলেজ থেকে ১৮৯২ সালে এফ.এ (বর্তমানে এইচ.এস.সি) এবং ১৮৯৪ সালে কলিকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে সাফল্যের সাথে বি.এ. পাশ করেন। ১৮৯৫ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দর্শন শাস্ত্রে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রঃ) মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রপিতামহীর ইচ্ছানুসারে ফয়জুননেছা মহারানি নামের মহিষীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধহন। কিন্তু সংসার জীবন শুরু করেন সরকারী চাকুরিতে প্রবেশের পর, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক কন্যা যিনি শৈশবে মারা যান ও আট পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা(রঃ) তাঁর কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার স্বীকৃতি অল্প সময়ের মধ্যেই অর্জন করেন। ১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক তাঁকে 'খানবাহাদুর' উপাধি প্রদান করা হয়। তিনি চাকরিতে প্রবেশের মাত্র ১৫ বৎসরের মধ্যে এই সাফল্য অর্জন করেন। ১৯১১ সালে তিনি Royal society for the encouragement of arts, manufactures & commerce এর সদস্য পদ লাভ করেন। তিনি ১৯১৯ সালে ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিস (I.E.S) ভুক্ত হন। মুছলমানদের মধ্যে তিনিই প্রথম (I.E.S) ভুক্ত হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরপ্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এক দশকেরও বেশি সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোটের (বর্তমান সিনেট) মেম্বার ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি লগ্নে ডঃ নাথান সাহেবের অধীনে Teaching কমিটির মেম্বার ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে বিশিষ্ট ও বহুমুখী অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলা একাডেমী তাঁকে ১৯৬০ সালে সম্মানসূচক 'ফেলোশিপ' প্রদান করেন। সমাজ সেবা ও সমাজ সংস্কৃতিতে বিশেষ করে দীন প্রচারের কাজে অবদানের জন্য ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ তাঁকে ১৪০৪ হি: তে মরণোত্তর পুরষ্কারে ভূষিত করে।