উনিশশো সাতচল্লিশের দেশভাগ উপমহা- দেশের সমাজ জীবনে বহুমাত্রিক প্রভাব রেখে গেছে, কিন্তু নারীর জীবনে তার প্রভাব গভীর এবং জটিল। যা ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে একথা জোর দিয়ে বলা যায় না। বিশেষ করে সাধারণ নারীর জীবনে যে প্রভাব রেখে গেছে তার অনেকটাই অব্যক্ত। দেশভাগের শিকার নারীর বেদনা, ত্যাগ এবং সংগ্রাম জীবনজুড়ে চলতে থাকে । এর কারণে নারীর জীবন বদলে যায়, অবস্থান পরিবর্তিত হয়ে যায়। এই পরিবর্তন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে বেড়াতে হয়। দেশভাগের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভাবের সাথে ব্যক্তিজীবনে, মননে যে প্রভাব রাখে, প্রকটভাবে যে ক্ষতচিহ্ন রেখে যায় তা গভীর এবং চিরস্থায়ী । এই বইতে দেশভাগের প্রভাব আমি দেখেছি আমার মায়ের জীবনের প্রেক্ষিতে । পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত একজন সাধারণ গৃহবধুর দেশভাগ পূর্ববর্তী এ অনুগতিক জীবনে দেশভাগ নিয়ে আসে অস্থিরতা, সংকট, দোলাচল এবং অনিশ্চয়তা। যার পরতে পরতে রয়েছে হাহাকার আর নীরব আর্তনাদ । দেশভাগ পরবর্তী জীবনে রয়েছে দারিদ্র, সংগ্রাম এবং টানাপোড়েন । রয়েছে উন্নতির সোপান থেকে শূন্যতে ছিটকে পড়া এবং নতুন করে ওপরে উঠার সোপান রচনা । এক জীবনে সবাই তা পেরে ওঠে না, স্বপ্নভঙ্গ জীবনকে নিঃশেষ করে দেয়। ব্যক্তিজীবনে দেশভাগের প্রভাব প্রথম যৌবনে একরকম মাত্রা বয়ে আনে, শেষ জীবনে তার দ্যোতনা ভিন্ন । যখন কী না মন আকুল হয় নিজ বাসভূমে ফিরে যেতে, কিন্তু কোন সম্ভাবনা থাকে না, থাকে শুধু কষ্ট আর স্মৃতির সম্ভার ।
সুরাইয়া বেগম এনডিসি (জ. ১৯৫৮) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএসএস অনার্স ও এমএসএস এবং ইংল্যান্ডের লীড্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'Health Management Planning and Policy' বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। তাঁর পেশাগত জীবন বহুমুখী অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। তিনি বিভিন্ন ক্যাপাসিটিতে স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ, স্থানীয় সরকার, অর্থ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি কলকাতাস্থ দূতাবাসের ১ম সচিব ও পর্যটন কর্পোরেশনের পরিচালক, সমবায় অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ও তথ্য বিভাগ; বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি তথ্য কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন ও সেবামূলক সাংগঠনিক কাজে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী যিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (NDC) সম্পন্ন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস উইমেন নেটওয়ার্ক (BCSWN)-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় কমিশনার (গার্ল-ইন-স্কাউটিং) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র ও দুই কন্যাসন্তানের জননী।