যে সকল মহান মনিষী অনন্য জ্ঞান-গবেষণা এবং বহুমুখী কর্মকান্ডের মাধ্যমে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য উজ্জল নক্ষত্রের মত চিরভাস্বর হয়ে আছেন, তাদের অন্যতম একজন মুহাম্মদ ইবন আবি বকর; যিনি 'আল্লামা হাফিজ ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়া নামে খ্যাত। তিনি ছিলেন খ্রিটিয় চতুর্দশ শতাব্দীর এক ক্ষণজন্মা পুরুষ। নানা মুখী জ্ঞান-গবেষণা এবং জ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে তাঁর সরব পদচারণার কারণে তিনি সমসাময়িক কালে এক অনন্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হন । তিনি ছিলেন একাধারে চিন্তাবিদ, গবেষক, লেখক, সুসাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক এবং নির্ভিক এক সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব। তাফসীর, হাদীছ, ফিকহ, ধর্মতত্ত্ব, আইনশাস্ত্র, ‘আকাইদ, দর্শন, ইতিহাস, সমরনীতি ও রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি সকল বিষয়েই তিনি ছিলেন অত্যন্ত গভীর জ্ঞানের অধিকারী। ইসলামের এমন কোন দিক ও বিভাগ নেই যে বিষয়ে তিনি কলম ধরেননি। তাঁর রচিত একশতটিরও বেশী গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায়, যার কোন কোনটি বহু খন্ডে বিভক্ত বিশাল ভলিয়মের। তিনি একজন সফল ও যোগ্য মুজতাহিদ হিসেবে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামের প্রকৃত ও সঠিক রূপ অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে তুলে ধরেছেন। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান এবং মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ ও উপযোগী সমাধান ইসলামে রয়েছে, তিনি তা অত্যন্ত বলিষ্ঠতার সাথে তুলে ধরেছেন। ইসলামী বিধি-বিধানের কার্যকারণ সমৃদ্ধ হওয়া, যৌক্তিক ও কল্যাণকরতা এবং তা যে হিকমত বা প্রজ্ঞাপূর্ণ সে বিষয়গুলো ‘আল্লামা ইবনুল কায়্যিম অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তুলে ধরেছেন। তিনি ইসলামকে মানব প্রকৃতির অনুকূল এক বুদ্ধিবৃত্তিক ও যৌক্তিক বিধান হিসেবে উপস্থাপন করে এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন অত্যন্ত সুনিপূণভাবে । কুরআন সুন্নাহর আলোকে আইন প্রণয়ন ও বিধি-বিধান রচনার যে সুক্ষ্ম ও চমৎকার নীতিমালা তিনি উদ্ভাবন করেছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিরল। বিভিন্ন বিষয়ে তার জ্ঞান ছিল অত্যন্ত পরিপক্ক, চিন্তা ছিল প্রখর এবং অভিমত ও সিদ্ধান্ত ছিল অত্যন্ত উপযোগী ও ভারসাম্যপূর্ণ। তিনি কুরআন সুন্নাহর একনিষ্ঠ অনুসারী ও উন্নত ‘আমল-আখলাকের অধিকারী ছিলেন। তিনি শুধু লেখক ও তত্ত্ববিশারদই ছিলেন না, বরং ইসলামের বাস্তব অনুসারী ও তা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ছিলেন একজন সাহসী সেনা নায়ক। তিনি ইমাম ইবন তাইমিয়ার অন্যতম শিষ্য ও তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী ছিলেন।