প্রাচীনকাল থেকেই টাঙ্গাইল শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতিচর্চার সূতিকাগার হিসেবে পরিগণিত। বাঙালি জাতিসত্তার উন্মেষ বিশেষ করে চর্যাপদের বিবর্তিত রূপ, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নসহ সাহিত্যের উজ্জ্বল বিকাশে সকল অঞ্চলের কবি সাহিত্যিকদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এক্ষেত্রে ঘাটাইল―বৃহদার্থে টাঙ্গাইলের কবি, সাহিত্যিক, প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকদের ভূমিকাও কোনো অংশে কম নয়। টাঙ্গাইলের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সাহিত্য নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কিছু গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন এ জেলারই কয়েকজন কৃতি সন্তান। তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ঐতিহাসিক অনিবার্যতার কারণেই টাঙ্গাইল বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এ জেলার একটি উল্লেখযোগ্য উপজেলা ঘাটাইল। একদিকে লাল পাহাড়ে আঁকা সবুজ বন-বনানীর ছায়া, অন্যদিকে সমতল ভূমিতে উৎপাদিত বাহারি শস্যদানা; যেন চমৎকার ভূতাত্ত্বিক উর্বরা শক্তির মোহে উদ্ভাসিত ঘাটাইলের মৃত্তিকা ও মানুষ। এ অঞ্চলে জন্ম নেয়া অনেক গুণিজন মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাস-ঐতিহ্য তথা সাহিত্যের নানা শাখায় জাতীয়ভাবে স্বীকৃত। তার একেকটি বিষয় নিয়ে একেকটি সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনা করা সময়েরই সদ্ব্যবহারমাত্র। প্রাসঙ্গিক কারণেই সকল বিষয়ে অবতারণা নয়, কেবল ‘ঘাটাইলের কবি ও কবিতা’ নিয়ে এক মলাটে ঘাটাইলের কবিগণের কাব্যভাবনা ও পরিচিতি তুলে ধরাই আমার একমাত্র অভীষ্ট। ষোড়শ শতকের প্রথমার্ধ থেকে ঘাটাইলে কবিতাচর্চার ইতিহাস পাওয়া যায়। এই শতকেই জন্মগ্রহণ করেন পদ্মপুরাণ কাব্যের রচয়িতা কবি পূর্ণচন্দ্র মিত্র। জামুরিয়া ইউনিয়নের গলগণ্ডা গ্রামে তার বাড়ি। কাছাকাছি সময়ে জন্মগ্রহণ করেন ধর্মমঙ্গল কাব্যের রচয়িতা রূপরাম ও পুঁথি রচয়িতা জহির উদ্দিন। দুজনের বাড়িই লোকের পাড়া ইউনিয়নের রূপের বয়রা গ্রামে। সতেরো শতকে জন্মগ্রহণ করেন ইমাম সাগরের পুঁথি রচয়িতা বরকত সরকার (১৭৩২-১৮১০খ্রি.)। তিনি গালা বীরসিংহের কবি। যথোপযুক্ত সংরক্ষণ ও ব্যাপক অনুসন্ধানের অভাবে সাহিত্যের অনেক নিদর্শন বিনষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে এইসব কবির সঠিক জন্ম-বৃত্তান্ত পুরোপুরি জানা যায়নি। যতটুকু জানা যায়, এঁদের মধ্যে পূর্ণচন্দ্র মিত্র ঘাটাইলের প্রাচীন কবি। আধুনিক কবিতা চর্চার সূচনাপর্বে ধলাপাড়ার কবি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী সনেট রচনায় বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা কবি সিরাজ উদ্দিন চৌধুরীও সনেট রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন। নূরপাড়ার মুফাখখারুল ইসলাম একজন প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও প্রথিতযশা কবি। তার কবিতায় ইসলামি ঐতিহ্যের প্রভাব আছে। প্রথম জীবনে তিনি কিছু রোমান্টিক গীতি কবিতাও রচনা করেছেন। আধুনিক কবিতার মেজাজ, গঠন-প্রকৃতি, শব্দ চয়ন ও জীবন-জটিলতার অনুভূতি যে সকল কবির হাতে সার্থক রূপ নিয়েছে, তার মধ্যে ঘাটাইলে জন্ম নেয়া কবিদেরও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
১৯৭৬ সালের ৩ জানুয়ারি ঘাটাইলের এম. গলগন্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ এমএ ডিগ্রি লাভ করে অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। পিতা- মির্জা সৈয়দ আলী, স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মাতা- সবজান বেগম, সুগৃহিণী। স্ত্রী- রেখা মির্জা দর্শনশাস্ত্রে বিএ (সম্মান)সহ এমএ ও একমাত্র সন্তান যারীন তাসনিম মুগ্ধকে নিয়ে তার যাপিত সংসার। কাব্যগ্রন্থ : স্বপ্নের ভেতর এক স্বপ্ন (২০০৫), ঘাসফুল কিংবা শ্রাবণের জল (২০১০)। ছড়াগ্রন্থ : মুগ্ধ হাসে ফোকলা দাঁতে (২০২০)। সম্পাদিত সাহিত্যকাগজ : অমৃত অন্বেষা। স্বীকৃতি: টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পুরস্কার (২০২০) কবি আযাদ কামাল শিক্ষানুরাগী এবং দক্ষ সাংস্কৃতিক সংগঠক। তিনি ঘাটাইলের সিংগুরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত ‘সিংগুরিয়া মহিলা বি.এম কলেজ’র উদ্যোক্তা ও অধ্যক্ষ। তিনি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ইউএসএ, টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ’র সহ-সাধারণ সম্পাদক।