স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবারই অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কে গরিব আর কে বড়লোক তার কোনো হিসাব ছিল না। সবারই একটি লক্ষ্য ও একটি উদ্দেশ্য ছিল―সেটা হলো একটি স্বাধীন দেশ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এত বিশাল ও এত ব্যাপক যে এসব ইতিহাস গল্প, কবিতা, উপন্যাস কিংবা ছড়ায়ও সীমাবদ্ধ করা যাবে না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল খুবই কম ছিল; কিন্তু এর ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রভাব ছিল মারাত্মক। লক্ষ লক্ষ লোক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে অকাতরে। রফিকুল হক দাদুভাই একজন প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক ও গর্বিত মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম। তার ছড়া, গল্প, উপন্যাস ও নাটকে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ। নানা অজানা কাহিনি তিনি তুলে এনেছেন শৈল্পিকভাবে। ‘একাত্তরের বিচ্ছু বশির’ তার একটি উল্লেখযোগ্য কিশোর উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্ন আমাদেরকে ঘিরে ছিল তা কি সত্য হয়েছে? শোষণ-বঞ্চনা, অভাব-অনটন, শ্রেণিবিভাজন মুক্ত একটি রাষ্ট্র কি আমরা নির্মাণ করতে পেরেছি? গরিবের ভাগ্য উন্নয়নে আমাদের কী করণীয় ছিল আর কী করছি? এসব প্রশ্ন জাগে এই উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নছির আলী, তার পুত্র বশির আলীর যে অবদান তা কি এ দেশের মানুষ জানে? তাদের কি কোনো মূল্যায়ন হয়েছে? তারা কী পেয়েছে এই স্বাধীন দেশে? গ্রাম ছেড়ে বশির এসেছে ঢাকা শহরে হোটেলের কাজে। কিন্তু হোটেলে সামান্য কয়েকটি প্লেট হাত থেকে পড়ে ভেঙে যাওয়াতে ম্যানেজার তাকে মেরে হোটেল থেকে বের করে দিয়েছে! উপায়হীন বশির ফুটপাতে শপিং ব্যাগ বিক্রি করতে নেমে পড়েছে পেটের তাগিদে। মুক্তিযোদ্ধা আরেফিন সাহেবের সাথে বশিরের দেখা হয়ে যায় গুলিস্তানে। তাদের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের এক অজানা অধ্যায় আর তাদের বীরত্ব। উপন্যাসটি পড়তে বসলে একটু প্রস্তুতি নিয়েই পড়া উচিত। ১০২ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি নানা শিরোনামে ভাগ করে লিখেছেন ঔপন্যাসিক রফিকুল হক দাদুভাই। উপন্যাসে মজার কিছু ঘটানাও রয়েছে। বশিরের নানা কাহিনি পড়ে একজন কিশোরের মধ্যে সেই ভাবাবেগ চলে আসবে, এটা বলা যায়। অনেকে মনে মনে ভাববে, সে সময় যদি সে থাকত তবে সে কী করত। বইটি সংগ্রহ করে নিজেকে পড়তে হবে, পারলে অন্যদেরও পড়তে দিতে হবে।