ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম নামাজ। বিশুদ্ধভাবে প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। অতএব এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না—যার নামাজ যত সুন্দর ও মজবুত হবে তার দীনের অন্যান্য কাজও তত বেশি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হবে। নামাজ মুমিন জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মহান প্রতিপালকের সঙ্গে সুনিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার সেতুবন্ধন। অশ্লীলতা ও পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার অনন্য হাতিয়ার। চরিত্র গঠনে অনুকরণীয় আদর্শ। মুমিন বান্দা ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়কারী। নামাজ ত্যাগ করলে কুফরিতে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জাবির রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন—‘মুমিন বান্দা ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮২) আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাজিয়াল্লাহু আনহু তার খিলাফতকালে নামাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রত্যেক অঞ্চলের কর্মকর্তাদের এই মর্মে পত্র লিখে পাঠাতেন—‘নিশ্চয়ই আমার কাছে তোমাদের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নামাজ। যে ব্যক্তি যথাযথ নামাজের হেফাজত করল, সে যেন দীন (এর অন্যান্য সকল বিধান) হেফাজত করল। পক্ষান্তরে যে নামাজে অবহেলা ও শৈথিল্য প্রদর্শন করল, সে যেন অন্য সকল কর্মে অবহেলা করল।’ (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ৬) কিন্তু দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্য—বর্তমানে এক শ্রেণির মুসলমান নামাজের প্রতি একেবারেই উদাসীন। নামাজ যে আল্লাহ প্রদত্ত এক অপরিহার্য বিধান সেই দিকে ভ্রƒক্ষেপ নেই বললেই চলে। বিধায় অনেকে তা দায়সারাভাবে আদায় করে থাকে। এ উদাসীনতার ফলেই নামাজে বিভিন্ন ভুলত্রুটির সৃষ্টি হয়। বিশেষত কিছু ভুলের কারণে নামাজ সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়। যার প্রতি আমাদের মোটেও খেয়াল নেই! অথচ এসব বিষয়ের অবগতি প্রত্যেক মুসল্লির জন্য একান্ত অপরিহার্য। অবশ্য নামাজে এমন কিছু ভুল আছে যে ভুলের দরুন নামাজ সম্পূর্ণ নষ্ট না হলেও ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়। সে ত্রুটি সংশোধনে শরিয়ত ‘সিজদা’র বিধান আরোপ করেছে। যা ফেকার পরিভাষায় মাসায়েলে সিজদা সাহু নামে অভিহিত। এটাও অনেকের কাছে অজানা। অথচ এ বিষয়টিও সকলের জানা অবশ্য কর্তব্য। এ অভাব পূরণে আমাদের এবারের আয়োজন দলিল ভিত্তিক সিজদা সাহুর মাসায়েল । প্রিয় পাঠক, ‘আল-হাদী প্রকাশন’র এ মনোমুগ্ধ আয়োজনে আপনাকে সাদর আমন্ত্রণ! বইটির কিছু বৈশিষ্ট্য ১. এ গ্রন্থে প্রায় দুই শতাধিক মাসআলা বর্ণনা করা হয়েছে। ২. সর্বসাধারণের কথা বিবেচনা করে প্রতিটি মাসআলাকে অতি সহজ-সরলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ৩. বইটিকে বিষয় ভিত্তিক দশটি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে। ৪. ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে প্রতিটি মাসআলার সাথে মাসআলার নম্বর সংযোজন করা হয়েছে। ৫. মূল মাসআলা বোঝার সুবিধার্থে বইয়ের শুরুতে সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ৬. কুরআন-হাদিস ও ইসলামি ফিকহের বিভিন্ন কিতাবাদির মাধ্যমে একে তথ্য সমৃদ্ধ করা হয়েছে। ৭. প্রতিটি মাসআলার পাদটীকায় আয়াত-হাদিস নং, সংশ্লিষ্ট ফতোয়ার কিতাবের খ- ও পৃষ্ঠা নং সংযোজন করা হয়েছে। ৮. কিতাবের একাধিক কপির ক্ষেত্রে বন্ধনীতে নির্বাচিত কপির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ৯. একাধিক বর্ণনা সংবলিত মাসআলার ক্ষেত্রে মুফতা বিহি কওল তথা ফতোয়া নির্ভর উক্তিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ১০. বইটি বাংলাদেশের স্বনামধন্য কয়েকজন বিজ্ঞ মুফতি নিরীক্ষণ করেছেন এবং সবশ্রেণির মানুষের জন্য উপকারী ও ফলপ্রসূ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
মুহাম্মাদ আলী জাওহার। ইসলামি ধারার সাহিত্য-কাননের এক সুগন্ধি ফুল। যে ফুল তার মনকাড়া সৌরভে মাতোয়ারা করে রেখেছে পাঠকহৃদয়। একযুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি লিখছেন। অনুবাদ করছেন। তার কলম ¯্রষ্টার কথা বলে। বলে সৃষ্টির কথাও। কলমের সাথে মনের মাধুরী মিশিয়ে তিনি এঁকে চলছেন মানুষ ও মানবতার ছবি। দেশ ও জাতির চিত্র। ১৯৮৬ সালের ৫ জুন শরিয়তপুরে জন্মগ্রহণ করা এ গুণীলেখক ছোটবেলা থেকেই প্রখর মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকার গুলবাগ হাফেজিয়া মাদরাসা থেকে মাত্র ৬ মাসেই সম্পন্ন করেন পবিত্র কুরআনের হিফজ। কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অর্জন করেন প্রথম স্থান। ২০০৬ সালে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ থেকে দাওরায়ে হাদিসে লাভ করেন ১ম বিভাগ। এরপর ২০০৮ সালে ঢাকার মুহাম্মদপুরস্থ আল মারকাজুল ইসলামী থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন ইফতা। মেধা তালিকায় অর্জন করেন ২য় স্থান। মাতৃভাষা বাঙলার পাশাপাশি তিনি উর্দু, আরবি, ফারসি ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ পারদর্শী। ২০০৯ সালে শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। এরপর থেকে দরস-তাদরিসের সাথেই আছেন। বর্তমানে মুহাদ্দিস ও সহকারী মুফতি হিসেবে কর্মরত আছেন দারুল উলুম রামপুরা, ঢাকায়। অধ্যয়ন ও অধ্যাপনের ফাঁকে ফাঁকে খোরাকসমৃদ্ধ লেখালেখিতেই কেটে যায় তার অবসর। তবে তার লেখালেখির হাতেখড়ি ২০০০ সালে। মাদরাসার দেয়ালিকায় নিয়মিত লেখার পাশাপাশি তিনি প্রবন্ধ রচনা ও ফিচার লিখেছেন নামিসব সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকায়। তার পাঠকপ্রিয় লেখাগুলোর মধ্যে রাসুলে আরাবি সা.-এর বাল্যজীবন, মহানবি সা.-এর বক্ষবিদারণ ও তাৎপর্য, কওমি মাদরাসার প্রয়োজনীয়তা, কওমি মাদরাসা আদর্শ মানব তৈরির সূতিকাগার ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গভীর পঠন-পাঠন ও নিবিড় অনুশীলনের মাধ্যমে সাহিত্যের রাজপথ ও বিভিন্ন গলি-ঘুপচি চষে বেড়ানোর পর ২০১২ সালে তিনি প্রকাশ করেন তার প্রথম অনূদিত গ্রন্থ ‘রাসুলুল্লাহ সা.-এর অশ্রু’। এরপর একে একে বাজারে এসেছে হাদিসের আলোকে নেক আমলের ফজিলত (মৌলিক), হাদিসের আলোকে গুনাহের শাস্তি (মৌলিক), ইসলাম ও আধুনিক ব্যবসা বাণিজ্য (অনূদিত), শেষ নবি (অনূদিত), তারা ঝিকিমিকি জ্বলে (অনূদিত) ও আরবি বক্তৃতা সংকলন ইত্যাদি। তাঁর রচিত ও অনূদিত বইগুলো পাঠকমহলে ব্যাপক সমাদৃতও হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর সময় ও হায়াতে বরকত দান করুন। মেধা ও মননে দান করুন সমৃদ্ধি। কলমকে করুন আরও শানিত...!