ইতিহাস-এতিহ্য আর সংস্কৃতির সমৃদ্ধভূমি চাঁদপুর। হাজার বছরে অসংখ্য মানুষের কর্মে-শ্রমে-ঘামে গড়ে উঠেছে এ সুবর্ণ-অঞ্চল। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ মাটির সন্তানদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উজ্জ্বল উপমহাদেশ জুড়ে। মধ্যযুগ থেকে এ জেলার মানুষ শিল্প-সাহিত্যে ভূমিকা রাখছে। মহাকবি আলাওলের পূর্বে চাঁদপুরের সন্তান দোনাগাজী লিখেছেন সয়ফুলমূলক বদিউজ্জামাল কাব্য । পরবর্তীতে সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন, বরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ শান্তিদেব ঘোষ, বাংলাদেশের প্রথম নারী চিত্রশিল্পী চিত্রনিভা চৌধুরী, আল্পনাশিল্পী সুকুমারী দেবী, দৃষ্টিপাত-এর লেখক যাযাবর, চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম, হাশেম খান, ফরিদা জামান, ঢালী আল মামুনসহ বহু মানুষের কর্ম ও কীর্তিতে রত্বগর্ভা হয়েছে চাদপুর। এ জেলায় নানাভাবে নানা কারণে এসেছেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বরেণ্যজন। তীদের পদস্পর্শে গর্বিত এ জেলার মানুষ । রবীন্দ্রনাথ হাজার বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি । তার হাত ধরে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ ও প্রসারিত হয়েছে। বৈশ্বিকভাবে তিনি আমাদের জন্যে বয়ে এনেছেন গৌরব ও সম্মান। তার জীবন ও কর্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছেন চাদপুরের মানুষেরা । তিনি মাত্র একবার চাদপুরে এলেও তার স্রেহে-সানিধ্যে-কর্মে এ ভূমির মানুষ ওতপ্রোতভাবে দীর্ঘসময় যুক্ত ছিলেন। বিশেষত শ্রীনিকেতনের রূপকার কালীমোহন ঘোষ, রবীন্দ্রসংগীত বিশেষজ্ঞ শান্তিদেব ঘোষ, শান্তিনিকেতনের শিল্পবিভাগের প্রথম নারী অধ্যাপক চিত্রনিভা চৌধুরী, দেশ সম্পাদক সাগরময় ঘোষ, আল্পনাশিল্পী সুকুমারী দেবী, সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন-এঁরা করার মতো । এঁদের কেউ রবীন্দ্রনাথের একনিষ্ঠ সহকর্মী, কেউ তীর সরাসরি ছাত্র, কেউ নিখাদ অনুরাগী । কৰি টাদপুরে আয়োজিত তার ৭৩তম ্মোঘসবে আশীর্বাদবাণী হিসেবে একটি কবিতাও পাঠিয়েছিলেন । রবীন্দ্রনাথ ও পূর্ববঙ্গ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা হলেও অজ্ঞাত কারণে অনালোকিত রয়ে গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত লোকপাত করার উদ্দেশ্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ও চাদপুরের মানুষেরা গ্রন্থ প্রকাশের প্রয়াস। এ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের সরাসরি চাদ পুরের মানুষদের কথা, স্বৃতিভাষ্য ও পত্রালাপ তুলে ধরা হয়েছে। একই সাথে কবির চাদপুরে আগমন, চাদপুরে আসার পথে কবির লেখা গান, ৭৩তম জন্মোৎসবে চাদপুরে প্রেরিত কবিতা, বিবৃতি ও উল্লেখযোগ্য ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে চাদপুর-সংশ্লিষ্ট দুর্লভ কয়েকটি ছবি। রবীন্দ্রনাথ চাদপুর এসেছেন ১৯২৬ সালে। আর “রবীন্দ্রনাথ ও চাদপুরের মানুষেরা' গ্রন্থটি প্রকাশ হচ্ছে প্রায় একশ বছর পর ২০২১ সালে। দীর্ঘসময় পরে হলেও আশা করি, আগ্রহী পাঠক গ্রন্থপাঠে রবীন্দ্রনাথ ও চাদপুর প্রসঙ্গে একটি পরিচ্ছন্ন ধারণা পাবেন। আর এমনটি হলেই আমার পরিশ্রম সার্থক বলে মনে করবো।