ফ্ল্যাপ ছেলেটাকে দেখলেই খুব কাছের মনে হবে আপনার, মনে হবে খুবই পরিচিত, একান্ত আপনজন। আপনার আরো মনে হবে-আরে, এ ছেলেটাকে তো চিনি, কোথায় যেন দেখেছি, কোথায় যেন দেখেছি...। সম্ভবত এ ছেলেটার সঙ্গে আগে কোথাও একবার পরিচয় হয়েছিল আপনার ছেলেটার নাম-নজির রহমনা। মায়ের বাবার নাম ছিল এটা। বাবার মতো ভালো মানুষের নজির নাকি অত্র এলাকায় একটিও ছিল না। মা তাই ছেলের নামও রাখেন নজির রহমান, যাতে নানার মতো একজন ভালো মানুষ হয় সে। কিন্তু কিছুটা বড় হয়ে ছেলেটা বুঝতে পারে তার মধ্যে আসলে ভালো মানুষের কোনো নজির নেই-তার মধ্যে হিংসা আছে, ক্রোধ আছে, লোভ আছে, খারাপ অনেক কিছুই আছে। তাই একদিন নিজের নামটা পাল্টে ফেলে সে। নজির নামটা যেহেতু মা নিজে রেখেছে, তাই মায়ের সম্মানার্থে নজিরের ‘ন’ (দন্ত্যন); আর দেশে অনেক রহমান টাইটেলধারী মানুষ আছেন, তাদের মধ্যে কেউ হয়েছেন রাহমান, কেউ হয়েছেন রেহমান, তাই রহমান পাল্টে অন্যরকমভাবে সে রাখে রুহমান। দুটো মিলিয়ে তার নতুন নাম দাঁড়ায়-দন্ত্যন রুহমান। মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে পালানো এ ছেলেটা একটাা ব্যাগ কুড়িয়ে পায় একদিন, ব্যাগের মধ্যে অন্যরকম কিছু আছে। ব্যাগটা ব্যাগের মালিককে ফেরত দেওয়ার জন্য সে হন্য হয়ে ঘোরে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একটা লোকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার, বাশার আলী নাম, অদ্ভুত অদ্ভুত গল্প বলে সে। ব্যাগটা ফেরত দিতে গিয়েই তার কথা হয় অর্পার সঙ্গে, কবিতার সঙ্গে, চৈতীর সঙ্গে, নিপূনের সঙ্গে। অবশেষে ব্যাগটা সে ফেরত দিতে পারে ব্যাগের মালিককে। তারপর, তারপর সে একটা গল্প বলে বাশার আলীকে। বাশার আলীর সব অদ্ভুত গল্প ম্লান হয়ে যায় এই গল্পের কাছে। তার মনে হয় এত অদ্ভুত গল্প সে আর কোনোদিন শোনেনি, শুনবেও না!
বর্তমান সময়ের তরুণ বাংলাদেশী লেখকদের তালিকা তৈরি করতে গেলে অনায়েসেই প্রথম সারিতে জায়গা করে নেবেন কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায়, মা রওশনারা পারুল ও বাবা মরহুম সোহরাব আলী তালুকদার। স্ত্রী ফারজানা ঊর্মি আর মেয়ে সুমর্মীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই লেখকের সংসার। সিরাজগঞ্জে বাড়ির পারিবারিক লাইব্রেরিতেই বই পড়ার হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলেও লেখালেখির শুরু ঢাকায় আসার পরে। ছোটগল্পের বই ‘স্বপ্নবেড়ি’ তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই, যা প্রকাশনায় ছিল ‘সময় প্রকাশন’। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে, চাইল্ড ড্রিম সোসাইটি নামের একটি সংগঠনে। এছাড়াও জড়িয়ে আছেন সাংবাদিকতা পেশার সাথে। পাঠক জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে সুমন্ত আসলামের সেরা বই হিসেবে নাম উঠে আসবে ‘হয়তো কেউ এসেছিল’, ‘জানি না কখন’ বা ‘কে তুমি’ অথবা ‘যদি কখনো’ এর মতো জনপ্রিয় সব বই এর নাম । এছাড়াও ‘নীল এই যে আমি!’, ‘আমি আছি কাছাকাছি’, ‘অ্যালিয়ান’, ‘জানালার ওপাশে’, ‘রোল নাম্বার শূন্য’, ‘বীভৎস’, ‘কেউ একজন আসবে বলে’, ‘জিনিয়াস জিনিয়ান’, ‘কোনো কোনো একলা রাত এমন’, ‘তবুও তোমায় আমি’, ‘অনুভব’, ‘মিস্টার ৪২০’, ‘স্পর্শের বাইরে’, ‘ভালো থেকো ভালোবেসে’, ‘ডাঁটি ভাঙা চশমা রাফিদ’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ’, ‘প্রিয়ব্রতর ব্যক্তিগত পাপ’, ‘জ্যোৎস্না বিলাস’, ‘মহাকিপ্পন’, ‘তপুর চালাকি’, ‘আশ্চর্য তুমিও!’, ‘হাফ সার্কেল’, ‘কঞ্জুস’, ‘মাঝরাতে সে যখন একা’, ‘আই এম গুড ডু’, ‘আই সে দ্য সান’, ‘তুমি ছুঁয়ে যাও বৃষ্টি তবু’সহ আরো অনেক বই রয়েছে লেখক সুমন্ত আসলাম এর বই সমগ্র এর তালিকায়। এছাড়াও সিরিজ আকারে লিখেছেন ‘বাউন্ডুলে’ ও ‘পাঁচ গোয়েন্দা’র মতো জনপ্রিয় কিছু বই। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে, এমনকি একুশে বই মেলাতেও সুমন্ত আসলাম এর বই সমূহ এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। ভাষাগত সারল্য ও সাবলীলতা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ। মানুষকে কেন্দ্র করে তাকে আবর্তিত করে যা যা আছে তা-ই মূলত তার লেখার বিষয়বস্তু।