বাবার ক্রিয়াকর্ম হয়ে যাবার মাস খানেকের মধ্যে ছন্দিতাদের এই পরিবারটি বাড়ি বিক্রি করে কোথায় চলে গেল, বোধহয় দু-চারটি যে আত্মীয়স্বজন ছিল, তাদের কাছেই নির্ভরতা খুঁজতে গেল পরিবারটি। আমাদের জনপদটি যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেল। শুধু প্রণবদা কোথা থেকে একটা বাহারি ফেজটুপি জোগাড় করে সেটা মাথায় চাপিয়ে বেশি বেশি করে ঘুড়ি ওড়াতে লাগলো— রাগ করে স্পেশাল মাঞ্জা লাগিয়ে নিজের মোমবাতি ঘুড়ি দিয়ে গন্নাকাটা বা পেটকাটি ঘুড়ি দেখলেই কেটে দিতে লাগলো। আর সেই ছেলেটি? যার সাদামাটা জীবনে পুঁজি-পাটা ছিল কম। তবু কী করে যেন ছন্দিতা নামের সেই মেঘদূতীর মুখে বাহ্যত ফুটে না-ওঠা দুঃখের রেখা সে পড়তে শিখেছিল। আকৈশোর ত্বকের ভেতরে সেই বালিকার মুকুল-মুকুল গন্ধকে লালন করেছিল— নিজের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে ঝিম-ধরানো নৃত্যের ছন্দকে অভিযোজিত করেছিল সে। সেই ছেলেটিই একমাত্র বুঝতে পেরেছিল ‘বেদনার গোপন কথাখানি’— যে কথা কাউকে বলা যায় না, কারোর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায় না।" সাধারণের তুচ্ছ জীবনের চারপাশেও চঞ্চলতা-ঔদাস্যের কত সমাহৃত দিনগুলি জমা হয়ে থাকে খুদকুড়োরই মতো। সেগুলো নিছক অনুস্মারক নয়, নয় অভিজ্ঞের ভূয়োদর্শন। এমনকী সবটা কারো একারও নয়। সেখানে আছে চারপাশের কত আয়োজন! তার মধ্যে থেকে যায় কত বিস্তৃত এই প্রাণবিশ্ব— থাকে কত মেঘের পরে মেঘ, কত রোদ, কত জলজ বাতাস, ‘দিন-রাত্তির’ আর ‘মোমবাতি’র উড়াল, পাকুড় গাছের ছায়া, পিটুলি গাছটিতে নাম না-জানা পাখিটির উল্লসিত ডাক, রূপেশ্বরী নদীটির বয়ে চলা। সেই অজানিত অনুভবের কথায় ভরে থাকে এই বইয়ের অবিন্যস্ত পৃষ্ঠাগুলি।