‘ওমর খৈয়াম ও নজরুল ইসলাম'—এই নামে একটি আলোচনা গ্রন্থ লেখার পরিকল্পনা ছিল অনেক দিনের। বিদেশী কবিদের মধ্যে যে দু'জন কবি নজরুল ইসলামের উপর সর্বাধিক প্রভাব রেখেছিলেন তাঁদের একজন পারস্যের ওমর খৈয়াম ও অন্যজন হাফিজ। নজরুল ইসলাম প্রথমে হাফিজকে বাংলায় অনুবাদ করেন। ‘আশায়’ নামক সেই কবিতাটি নজরুল ইসলাম প্রমথনাথ চৌধুরী সম্পাদিত 'সবুজপত্রে' প্রকাশের জন্যে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে সেটা ছাপা হয়নি। ‘সবুজপত্রে'র সহকারী সম্পাদক পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় সেটা 'প্রবাসী'তে ছাপিয়ে দেন। খুশি হয়ে ‘করাচি’র সেনা-ক্যাম্প থেকে নজরুল পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখেন— “প্রবাসী’তে বেরিয়েছে ‘সবুজপত্র'-এ পাঠানো কবিতা, এতে কবিতার মর্যাদা বেড়েছে কি কমেছে, তা আমি ভাবতে পারছি না। ‘সবুজ- পত্র'-এর নিজস্ব আভিজাত্য থাকলেও ‘প্রবাসী'র মর্যাদা একটুও কম নয়। প্রচার আরও বেশি। তা ছাড়া আমি কবিতা লিখেছি, পারসিক কবি হাফিজের মধ্যে বাঙলার সবুজ দূর্বা ও জুঁই ফুলের সুবাস আর প্রিয়ার চূর্ণ কুন্তলের যে মৃদু গন্ধের সন্ধান আমি পেয়েছি, সে-সবই ত খাঁটি বাঙলার কথা, বাঙালী জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, আনন্দরসের পরিপূর্ণ সমারোহ। কত শত বছর আগের পারস্যের কবি, আর কোথায় আজকের সদ্য শিশির-ভেজা সবুজ বাঙলা। ভারতের উত্তর- পশ্চিম প্রান্তের রুক্ষ্ম পরিবেশে মৃত্যুসমারোহের মধ্যে বসে এই যে চিরন্তন প্রেমিক মনের সমভাব আমি চাক্ষুষ করলাম, আমার ভাষায় আমার আপনজন বাঙালীকে সেই কথা জানাবার আকুল আগ্রহই এই এক টুকরো কবিতা হ'য়ে ফুটে বেরিয়েছে। জানি না, জুঁই ফুলের মৃদু গন্ধ ও দূর্বার শ্যামলতা এর মধ্যে ফুটেছে কি-না। তবু বাঙালীর সচেতন মনে মানুষের ভাবজীবনের এই একতাবোধ যদি জাগাতে পারে, তবে নিজেকে ধন্য মনে করব।”