এক সময় বাংলাদেশের বুকে এক আশ্চর্য নবজাগরণ দেখা গিয়েছিল। সারা পৃথিবীর ইতিহাসে তার তুলনা বিরল। একই সঙ্গে একাধিক বাগ্মী, সাহিত্যিক, শিল্পী, রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী প্রমুখের আবির্ভাব ঘটে। এই নবজাগরণকে বলা হয় সাংস্কৃতিক নবজাগরণ । এই নবজাগরণের অন্যতম পুরধা ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । বিদ্যাসাগর প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে অবাক হতে হয়। একজন মানুষ এক জীবনে বিভিন্ন বিষয়ে কর্মদক্ষতা দেখাতে পারেন, বিদ্যাসাগরকে না পড়লে তা বোঝার উপায় নেই। একাধারে তিনি ছিলেন একজন শিক্ষাব্রতী, সমাজ-সংস্কারক এবং দেশপ্রেমিক। তাঁর সারাজীবনের ইচ্ছে ছিল নারীজাতিকে শিক্ষার আলোকে উদ্ভাসিত করবেন। একক পরিশ্রমে এই কাজে তিনি অনেকটা সফল হয়েছিলেন। এর পাশাপাশি যদি আমরা তাঁর সমাজসংস্কারকের ভূমিকা সম্পর্কে আলোকপাত করি, তাহলে আমাদের বিস্ময় হবে আকাশচুম্বী। বিধবা বিবাহের মতো একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়কে তিনি আইনসিদ্ধ করেছিলেন। এজন্য তাঁকে অনেক সামাজিক লাঞ্ছনা এবং মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল। এমনকী শারীরিক নিগ্রহেরও শিকার হতে হয়। অকুতোভয়-বীরপুরুষ বিদ্যাসাগর এইসব প্রতিবন্ধতাকে অস্বীকার করার মতো ক্ষমতা রেখেছিলেন। মহান দেশপ্রেমিক হিসাবে তাঁর ভূমিকার কথা হয়তো আজ আমরা ভুলে গেছি। একাধিকবার তাঁর সঙ্গে ব্রিটিশ প্রশাসকদের সংঘাত দেখা দিয়েছে। প্রতিবারই তিনি তাঁর অনন্য দেশপ্রেমের উজ্জ্বল সাক্ষ্য রেখেছিলেন।