একদিন খুব ঝড়-বৃষ্টির রাত ছিল। সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল পুরো শহরে। কিছুক্ষণ পর পর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। বজ্রপাতের শব্দ শোনা যাচ্ছিল খুব কাছেই। এমরান সাহেবও সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরে এসেছিলেন। একটা সময় চার্জ লাইটেরও চার্জও শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমরা রাতের দশটা পর্যন্ত মায়ের রুমে ছিলাম। আবহাওয়ার এমন খারাপ অবস্থা, অসুস্থ মাকে বুঝতে দেইনি। এই বাড়িতে আমার কাজই হলো বেশির ভাগ সময় মায়ের কাছাকাছি থাকা। যদিও মায়ের দেখাশোনা করার জন্য একজন নার্স সার্বক্ষণিক বাড়িতেই থাকতেন। তারপরও আমি কাছাকাছি থাকতাম। মৃতপ্রায় একজন মানুষ বিছানায় পড়ে অাছেন, দেখলেই আমার কেমন যেন মায়া লাগত। মা ঘুমানোর পর প্রতিদিনের মতো আমরা রুমে ফিরে এলাম। কম্পিউটার নেই, বিদ্যুৎ নেই, ইন্টারনেট নেই, টিভি নেই। ঘর অন্ধকার করে আমার প্রাপ্ত বয়স্ক দুইজন মানুষ স্বামী -স্ত্রী পরিচয় নিয়ে মুখোমুখি বসে রইলাম। অসম্ভব পৌরুষদীপ্ত একজন পুরুষ আমার একহাত ব্যবধানে বসে ছিল। বাইরে মন পাগল করা বৃষ্টি হচ্ছিল। রুম অন্ধকার, দরজা -জানালা সব বন্ধ। বাইরে কী ঝড় বয়ে গেলো সেটা জানি না। তবে দুই জন প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর মনে, শরীরে যে ঝড় বয়ে গেলো, সে ঝড় সামলানোর ক্ষমতা কারো ছিল না। আমি পৌরুষদীপ্ত এক সুপুরুষের বাহুডোরে নিজেকে স্বেচ্ছায় সমর্পণ করে দিলাম। আমার ৪৪ বছর জীবনে নারী হিসাবে শ্রেষ্ঠ পাওয়া হলো সেই ঝড়-বৃষ্টির রাত। "তারপর! তিসা!" আমি চমকে সামনে তাকাতেই শাওন বলল "আজ মনি আসবে। আমি বাজারে যাচ্ছি রমজানকে নিয়ে। আজ মেয়েটার পছন্দের সব খাবার রান্না করবে।" "তুমি না বড় আপাকে দেখতে গিয়ে দুইদিন আগে মনির সাথে দেখা করে এলে। আজ মনি আসবে সেটা তো বলোনি।" শাওন আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বের হয়ে গেলো। মুনিরা সারোয়ার আমাদের একমাত্র মেয়ে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস পড়ছে। সবাই মুনিরা ডাকলেও আমি তাকে আদর করে মনি ডাকি। শাওনও আমার দেখাদেখি মুনিরাকে মনি বলেই ডাকে মাঝেমধ্যে। আজও মনি বলেই সম্বাধন করল। ওর মুখে মনি ডাকটা আমার ভালোলাগে না। # ‘‘যে জীবন বিষাদের'' অংশবিশেষ