ড. আহমদ শরীফ উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী। তিনি দ্রোহী পণ্ডিত, উভয় বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতিতে মুক্তনামা বিবেকবান ও খ্যাতনামা চিন্তক ও মনীষী হিসেবে স্বীকৃত। একাধারে তিনি অধ্যাপক, গবেষক, লেখক, সমাজ ও সভ্যতার অনুপুঙ্খ বিশ্লেষক। তাঁর শাণিত কলম, ধারালো যুক্তি উভয় বাংলার বিদ্বৎ সমাজকে ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা এবং শোষণহীন সমাজ গঠনে কোনো-না-কোনোভাবে উদ্বুদ্ধ ও প্রভাবিত করেছে। তাঁর জীবনতাবস্থায় এবং প্রয়ানের পর তাঁকে নিয়ে লেখেননি এমন চিন্তক, বুদ্ধিজীবী পাওয়া দুস্কর। দেশে ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন লেখা বক্তৃতা, বিবৃতি, কিংবদিতুল্য মনীষী আহমদ শরীফের জন্মশতবর্ষে সেসব লেখা থেকে বেশকিছু লেখা নিয়ে সাজানো হয়েছে “আহমদ শরীফ শতবর্ষ স্মারকগ্রন্থটি”। বর্তমান গ্রন্থে বাংলাদেশের শিক্ষা-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের অত্যন্ত পরিচিত চিন্তক গবেষক বিশিষ্ট মোট ৮৩ জনের লেখা সংকলিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য এই ৮৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁদের যে, দৃষ্টিকোণ থেকে আহমদ শরীফের সাহিত্য, গবেষণা, সামাজিক, রাজনৈতিক ভাবনার মূল্যায়ন এবং আগামী প্রজন্মের কাছে মূল্যবান আবার হিসেবে বিবেচিত হবে। গবেষক ও বিশ্লেষকরা তাদের গবেষণা কাজে এই গ্রন্থ থেকে বহুমুল্যবান উপাদান খুঁজে পাবেন। দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের উৎসুক পাঠকদের কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তথ্য নির্দেশ গ্রন্থ হিসেবেও বিবেচিত হবে বলে আশা করা যায়। চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত পটিয়া উপজেলার সুচক্রদণ্ডি গ্রামের ‘সাহিত্যবিশারদ’ বাড়ির সন্তান নেহাল করিম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে বি এ (সম্মান), এম এ এবং ভারতের পুনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। এছাড়া এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এআইটি) ব্যাংকক, থাইল্যান্ড ও লুভেন বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাসেলস, বেলজিয়াম থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপর বিশেষ সার্টিফিকেট কোর্স করেছেন। তিনি দুর্যোগের সমাজবিজ্ঞান, সামাজিক অসমতা, সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণ, সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন, অপরাধ বিজ্ঞানসহ বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ে উৎসাহী। এ পর্যন্ত তাঁর মৌলিক গ্রন্থসহ সম্পাদিত ও সংকলিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৫টি। তাঁর অসংখ্য প্রবন্ধ দেশি-বিদেশি গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: The Emergence of Nationalism in Bangladesh, বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের উদ্ভব, Sociological Perspectives of Bangladesh, বাঙলা বাঙালী বাংলাদেশ ইত্যাদি। এছাড়া তিনি বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সাথে জড়িত। এরমধ্যে বিশ্ব দুর্যোগ ও জরুরি ঔষধ সংঘ (যুক্তরাষ্ট্র), ভারতীয় নৃতত্ত্ব সমিতি (কলকাতা), বাংলা একাডেমি এবং মুক্ত মনের সমাবেশ ইত্যাদি স্টাডি সেন্টারের পরিচালক এবং মিরপুরে অবস্থিত ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি)-র শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অবসর প্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক।
বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার অনন্য ব্যক্তিত্ব এবং মধ্যযুগের সাহিত্য ও ইতিহাসের বিদগ্ধ পণ্ডিত ড. আহমদ শরীফ পঞ্চাশ দশক থেকে নিয়মিতভাবে প্ৰবন্ধ লেখা শুরু করেছিলেন এবং তা তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলমান ছিল। ড. আহমদ শরীফ এমন একজন ব্যক্তিত্ব যাকে উপেক্ষা করা যায় তবে কোনো অবস্থাতেই তাঁর বিশাল কীর্তি অস্বীকার করা যায় না । নিজস্ব দর্শন চিন্তা ও বৈশিষ্ট্যের কারণে বোদ্ধা সমাজের কাছে তিনি ছিলেন বহুল আলোচিত, সমালোচিত ও বিতর্কিত এবং তাঁর মৃত্যুর পরেও এ ধারা বহমান। ভাববাদ মানবতাবাদ ও মার্কসবাদের যৌগিক ধ্যান-ধারণা, আচার-আচরণে, বক্তব্য ও লেখনীতে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ও সমাজ সম্পর্কে পাহাড়সম গবেষণাকর্ম, সহস্রাধিক প্ৰবন্ধ তাকে কিংবদন্তী পণ্ডিত হিশেবে উভয় বঙ্গে ব্যাপকভাবে পরিচিতি দিয়েছে। জন্ম ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২১; গ্রাম সুচক্রদণ্ডী, উপজেলা পটিয়া, জেলা চট্টগ্রাম। পিতা আব্দুল আজিজ, মাতা সিরাজ খাতুন। প্রথম স্কুল চট্টগ্রাম শহরের আলকরণ মিউনিসিপ্যাল প্ৰাথমিক বিদ্যালয়। প্রবেশিকা পাশ করেন পটিয়া হাই স্কুল থেকে, আর আইএ, এবং বিএ পাশ করেন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে, এবং এমএ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । ১৯৬৭ সালে ডক্টরেট উপাধি লাভ, বিষয়: সৈয়দ সুলতান, তার যুগ ও গ্রন্থাবলী । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক । মৃত্যু ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ ৷৷