স্বল্প বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ফরেস্ট গাম্পের সহজসরল আচরণ ও কথাবার্তা এবং শারীরিক কিছু অক্ষমতার কারণে ছেলেবেলা থেকেই সে সহপাঠী ও সমবয়সীদের কাছে নির্বোধ, বোকা, এমনকি পাগল হিসেবে বিবেচিত হয়ে নানা ধরনের বিদ্রুপ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে এসেছে। কেউই তার বন্ধু হতে চাইত না। কিন্তু তার মা তাকে কখনোই 'ভিন্ন' ভাবতে দিতেন না এবং তাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে গিয়েছেন। ফরেস্ট তার সাদাসিধে ভাবনার কারণে যে কাজেই হাত দেয়, সেখানেই সফলতা পায়। ভার্সিটিতে রাগবি খেলায় সেরা খেলোয়াড়, ভিয়েতনামের যুদ্ধে আর্মির সর্বোচ্চ বীরত্বপূর্ণ খেতাব লাভ, পিংপং খেলায় দেশ সেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদা অর্জন ও সারা আমেরিকার চারপ্রান্ত দৌড়ে একদিকে যেমন সে সকলের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় এবং রীতিমতো সেলিব্রেটি বনে যায়, অন্যদিকে চিংড়িমাছ ধরায় ঈর্ষণীয় সাফল্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়ে যায়। যদিও সে এই অর্থ নিজের জন্য না রেখে নানা সেবামূলক ও জনহিতকর কাজে ব্যয় করে। মূলত সততা, পরোপকারিতা, কঠোর পরিশ্রম, যেকোনো কাজে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে লেগে থাকা, কথা দিয়ে কথা রাখা, কখনোই কারো উপরে রাগ না করা ইত্যাদি “বিলুপ্ত প্রায়” গুণসমূহকে চলচ্চিত্রে ফরেস্টের মাধ্যমে এমনভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে, যা আমেরিকার সাধারণ মানুষের আবেগে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছে। এছাড়া এই মুভিতে “ভালোবাসা" বিভিন্ন রূপে এসেছে মা-ছেলের ভালোবাসা, ছেলেবেলার বন্ধু ভবঘুরে স্বভাবের প্রেমিকা জেনির প্রতি ফরেস্টের ভালোবাসা, ভিয়েতনামের যুদ্ধে নিহত ফরেস্টের বেস্টফ্রেন্ড বাব্বার সাথে গড়ে ওঠা সম্পর্ক ও তার প্রতি ভালোবাসা এবং সর্বোপরি যুদ্ধক্ষেত্রে তার প্লাটুন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ড্যানের প্রতি শ্রদ্ধা, আনুগত্য ও ভালোবাসা এই ছবিটিকে ভিন্ন এক মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। উইনস্টোন গ্রুমের লেখা মূল উপন্যাসটিতে এসব বিষয় না থাকলেও প্যারামাউন্ট পিকচার্স ছবিটি নির্মাণের জন্য বইটির কপিরাইট কিনে নিয়ে নিজেরা যে চিত্রনাট্যটি লিখেছিল, সেখানে উপর্যুক্ত বিষয়সমূহ অসাধারণ দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছে। যে কারণে বইটি সফলতা না পেলেও প্রায় একই থিম ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে মুভিটি এতটা সফলতা পেয়েছিল।