সৃষ্টির শুরু থেকেই শয়তান মানুষকে তার ফাঁদে ফেলার জন্য চক্রান্ত করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতা জারি আছে আজও। প্রতিনিয়ত শয়তান ও তার অনুসারীরা মানুষকে ধোঁকায় ফেলার জন্য ফাঁদ পেতে বসে থাকে। মানুষকে সরলপথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য শয়তান ও তার দল সদা নিমগ্ন। মানুষের সামনে-পেছনে, ডানে-বামে সবদিকেই শয়তানের অনুসারীরা জাল বুনে আছে। এ জাল বুনতে তারা বেছে নিয়েছে বিভিন্ন অপকৌশল, কুমন্ত্রণা ও ওয়াসওয়াসার। প্রায়শই শয়তান আমাদের সামনে নানা প্রলোভন নিয়ে হাজির হয়, আমাদেরকে চারপাশে বসে থাকে ওঁত পেতে। অনেক সময় ইবাদাত-বন্দেগি সম্পর্কেও শয়তান আমাদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে, কুমন্ত্রণা দেয়। বক্ষ্যমাণ বইটি আলোচ্য বিষয়েই এক অনবদ্য সংযোজন। প্রসিদ্ধ ইমাম ইবনুল কায়্যিম আল জাওযী রহিমাহুল্লাহ রচিত ‘মাকায়িদুশ শায়াতিন ফিল ওয়াসওয়াসাতি’ গ্রন্থের ইংরেজি সংস্করণের অনুবাদ। বইটিতে মানবজাতির সর্বনিকৃষ্ট শত্রু শয়তানের নানান ফাঁদ, প্রলোভন, অপকৌশল, কুমন্ত্রণা ও ওয়াসওয়াসার চিহ্নিত করে এসবের প্রতিকার তুলে ধরা হয়েছে। তাই, বিষয়বস্তুর ব্যাপ্তির প্রতি লক্ষ্য রেখে আমরা বইটির নাম রেখেছি “শয়তানের প্রবঞ্চনা”। প্রকৃতপক্ষে, শয়তানের চোরাফাঁদ, কূটকৌশল ও চক্রান্ত সম্পর্কিত পর্যাপ্ত ইলমের অভাবেই আমরা বারংবার তার ফাঁদে পা দেই। ধোঁকায় পড়ে যাই তার ঘৃণ্য চক্রান্তের। অথচ কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, শয়তানের চক্রান্ত অত্যন্ত দুর্বল। إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا “শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।” কাজেই, এ বিষয়ে পর্যাপ্ত ইলম থাকলে আমরা অনায়াসেই শয়তান ও তার অনুসারীদের ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করতে পারব। শয়তানের দলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের চারপাশে গড়ে তুলতে পারব এক অপ্রতিরোধ্য প্রতিরক্ষা দুর্গ। আমাদের বিশ্বাস, বইটি আমাদের চারপাশে সেই প্রতিরক্ষা দুর্গ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। পরিশেষে, আমি আল্লাহ রব্বুল আলামিন-এর নিকট বইটির কবুলিয়্যাত কামনা করি, অন্তরের অন্তস্তল থেকে দুআ করি যেন বইটি আমাদের নাজাতের উসিলা হয়। আমিন, ইয়া রব্বাল আলামিন।
ইমাম যাহাবীর ছাত্র তাজ-উদ-দীন আব্দুল ওয়াহ্হাব আস-সুবকী বলেন, “আমাদের শাইখ ও উস্তায ইমাম হাফেয শামসুদ্দীন আবু আব্দুল্লাহ আত-তুর্কমানী আয-যাহাবী যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস। তিনি নজির-বিহীন। তিনি এমন এক গুপ্তধন, যার কাছে আমরা সমস্যায় পতিত হলে ছুটে যাই। হিফযের দিক থেকে সৃষ্টিজগতের সেরা। শাব্দিক ও অর্থগতভাবে তিনি খাঁটি সোনা। ‘জারহ ও তাদীল’ শাস্ত্রের পণ্ডিত। ‘রিজালশাস্ত্রে’ তিনিই বিজ্ঞ। যেন সমগ্র উম্মাহর লোকজনকে একটা প্রান্তরে একত্র করা হয়েছে, আর তিনি তাদের দেখে দেখে তাদের ব্যাপারে বলছেন। তার জন্ম ৬৭৩ হিজরী সনে। আঠার বছর বয়সে তিনি হাদীস অন্বেষণ শুরু করেন। দামেস্ক, বা‘লাবাক্কা, মিশর, আলেকজান্দ্রিয়া, মক্কা, আলেপ্পো, নাবুলসসহ নানা শহরে তিনি গমন করেন। তার শাইখের সংখ্যা অগণিত। তার থেকে প্রচুর সংখ্যক মানুষ হাদীস শুনেছে। তিনি হাদীস-শাস্ত্রের খেদমতে রত ছিলেন, এমনকি এ ব্যাপারে গভীর জ্ঞানে পৌঁছেছেন। দামেস্কে অবস্থান নিলেন। সকল দেশ থেকে তার উদ্দেশ্যে লোকজন আসতে থাকল। ‘আত-তারীখুল কাবীর’ তিনি রচনা করলেন। আরও লিখলেন ‘আত-তারীখুল আওসাত্ব’ যেটা ‘ইবার’ নামেও পরিচিত। সেটা বেশ সুন্দর। আরেকটা ছোট বই লিখেলেন, ‘দুওয়ালুল ইসলাম’। এছাড়া ‘কিতাবুন নুবালা’ ও ‘আল-মীযান ফিদ-দুয়াফা’ রচনা করেন। শেষোক্ত বইটি সর্বশ্রেষ্ঠ বই। আরও রচনা করেন ‘সুনান বাইহাকী’র মুখতাসার। এটিও ভালো। লিখেছেন ‘ত্বাবাকাতুল হুফ্ফায’, ‘ত্বাবাকাতুল ক্বুর্রা’-সহ আরও নানা সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ। বিভিন্ন রেওয়ায়াতে তিনি কুরআন শিখেন এবং শিক্ষা প্রদান করেন। ৭৪৮ হিজরী সনে তিনি মারা যান। মৃত্যুর কিছু দিন আগ থেকে তিনি চোখের জ্যোতি হারিয়েছিলেন।” [ত্বাবাকাতুশ শাফেইয়্যা আল-কুবরা: (৯/১০০-১২৩)।]