জলপ্লাবনের ভেতর দিয়ে জমিতে যেমন পলিমাটি জমে, গাছের পাতা ঝরে যাবার পর নতুন পাতারা উঁকি দেয়, তেমনি অসময় দুঃসময় বিপর্যয় ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়েও মানুষ এবং ইতিহাসের জন্য কখনো কখনো সৃষ্টির সূচনা ঘটে, প্রলয়ের জমিনে সৃষ্টির বীজ উপ্ত হয়, শ্মশানে জেগে ওঠে প্রাণের দেবতা, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নতুন এক বোধন-উৎসব। উনিশ শতকের প্রায় মধ্যবর্তী সময়ে বিশে^র বৃহৎ একটি মানবিক বিপর্যয়Ñ স্বাধীনতার নামে বৃহৎ ভারতবর্ষের খ-ায়ন, সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানের নামে দেশভাগ-বাংলাভাগ, স্বাধীনতার আগুনে বিপুলসংখ্যক মানুষের গৃহদাহ, স্বাধীনতার বেদিতে ব্যাপক নরবলি, অগনিত নিরপরাধ মানুষের সাত পুরুষের ভিটেমাটি থেকে উন্মূল হয়ে পাকিস্তান থেকে ভারতে কিংবা পূর্ববাংলা থেকে পশ্চিমবাংরায় কিংবা ভারত থেকে পাকিস্তান মহানিষ্ক্রমণ বিশে^র ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে আছে। দেশভাগ এবং বাংলাভাগের এই রক্তাক্ত জঠরে জন্ম নিয়েছে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক এবং গান। বেশ কজন বিখ্যাত গীতিকার গান লিখেছেন দেশভাগের পূর্বাপর পটভূমিতে। হয়তো আরও কত অজ্ঞাত গীতিকারের গান হারিয়েও গেছে। দেশভাগের গানে মূলত দেশজননী বিশেষত বঙ্গজননী এবং তার সন্তানদের কান্নার সুরই শোনা যায়। গানগুলো পাঠ ও পর্যালোচনা করলে দেশভাগের পূর্বাপর প্রেক্ষাপট এবং পরিণতির করুণ চিত্র পাওয়া যায়। অপরাপর শিল্পমাধ্যমের মতো গানগুলো দেশভাগের প্রভাব প্রতিক্রিয়া হাহাকার যন্ত্রণা স্মৃতিকাতরতা প্রকাশের বাহন যেমন হয়ে উঠেছে তেমনি মিলনের কথাও শুনিয়েছে। ইতিহাসের একটি বিশেষ কালখ-ের, একটি ক্রান্তিকালের স্মারকচিহ্ন হয়ে আছে এই গানগুলো। দেশভাগে হারিয়ে যাওয়ার মানুষগুলো এই গানের কথায় নিজেদের নতুন করে খুঁজে পায়, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া স্বজনদের কাছে আসার আহ্বান জানায়। বিচ্ছিন্ন বাঙালির একাত্ম হয়ে যায় এই গানের বাণীতে, সুরের বন্ধনে।
জন্ম ১৯৭৬, বাগেরহাট জেলার। রামপাল উপজেলার বড় সন্ন্যাসী গ্রামে। পিতা-অধ্যাপক দিলীপকুমার মণ্ডল, মাতা-শ্রীমতী অনিমা রানী। বিভূতিভূষণ মণ্ডল ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ। লেখার হাতেখড়ি অন্যান্য অনেকের মতােই কবিতা দিয়ে। পরবর্তীকালে মূলত: গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনায় আত্মনিয়ােগ। প্রকাশিত বই-গানের পথিক। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে তিনি ‘অদ্বৈত। মল্লবর্মণ উৎসব-২০০৭'-এ ‘নিম্নবর্গের সাহিত্য-পুরুষ অদ্বৈত মল্লবর্মণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। কর্মজীবনে তিনি খুলনার শহীদ আবুল কাশেম ডিগ্রী কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক। তিনি লিটল ম্যাগ আন্দোলনের একজন কর্মীও।