"বাংলাদেশের মাটির পুতুল ও খেলনা" বইটির 'ভূমিকা' থেকে নেয়াঃ প্রাচীন বাংলা সাহিত্য বা ভাষায় 'পুতুল' শব্দটির ব্যবহার দৃষ্টিগোচর হয় না। বরং পুত্তলিকা পুত্তলক ইত্যাদির ব্যবহার রয়েছে। তবে চর্যাপদের যুগে চুরাশি সিদ্ধার কাহিনী বা 'চতুরশীতিসিদ্ধ প্রবৃত্তি' (তিব্বতী) গ্রন্থে ‘বংগল’ দেশের 'পুতলিপা' নামক একজন সিদ্ধাচার্যের নাম পাওয়া যায় যিনি সহজযানী বৌদ্ধদের দেবতা হেবজ্র-র মূর্তি বা ছবি নিয়ে মাধুকরী সংগ্রহে যেতেন। অনুমান করা হয় যে, মূর্তি নির্মাতা বা ছবি আঁকিয়ে হিসেবেই তিনি 'পুতলিপা' নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, সে যুগে ‘পুতলি' অর্থে মূর্তি ও ছবি উভয়ই বোঝাতো। আজও বিক্রমপুর ও ফরিদপুরের লক্ষ্মীসরা নির্মাতারা সরার উপর আঁকা দেব দেবীর রূপগুলোকে 'পুতলা' বা 'পুতুল' বলেন এবং উৎকীর্ণ দেব দেবীর সংখ্যা অনুযায়ী সরাগুলোকে তাঁরা ‘তিন পুতুল সরা' 'পাঁচ পুতুল সরা' নয় পুতুল সরা’-এভাবে শ্রেণীভুক্ত করেন। আবার ব্রত অনুষ্ঠানগুলোতেও মানুষ বা জীবজন্তুর যেসব রূপ ব্যবহার করা হয় তা ভাস্কর্যের মতো ত্রিমাত্রিকভাবে গড়া বা ছবির মতো দ্বিমাত্রিকভাবে আঁকা যেমনই হোকনা কেন সেগুলোকে পুতুল হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়। তবে পুতুল বলতে আমরা এখন যা বুঝি তা ভাস্কর্য থেকে কিছু পরিমাণে এবং চিত্রকলা থেকে সম্পূর্ণভাবেই ভিন্ন ও স্বতন্ত্র একটি শিল্প মাধ্যম।